ফাঁসির দণ্ড হওয়ার পর টেকনাফের বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ এখন কারাগারের অন্ধকার কনডেম সেলে। তার এই বিপদের দিনে পাশে নেই স্ত্রী চুমকি কারণ। দুই ছেলে সন্তান নিয়ে তিনি বর্তমানে কোথায় আছেন সে সম্পর্কে কেউই কিছু জানে না। কিন্তু চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা এলাকায় রয়েছে এই দম্পতির ছয় তলা অট্টালিকা ‘লক্ষীকুঞ্জ’। সেই লক্ষীকুঞ্জ এখন কেমন আছে, কেইবা থাকেন ওই ভবনটিতে সেই খোঁজ নিয়েছে রাইজিংবিডি।
চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার পাশ ধরেই একটু সামনে গেলেই পাথরঘাটা গির্জা। সেখান থেকে কয়েকশ গজ দূরে সেন্ট প্লাসিডস স্কুল। এর একটু দূরেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রদীপের ‘লক্ষীকুঞ্জ’ ভবনটি।
বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনটির কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পালন করছেন টুকু মিয়া নামের এক ব্যক্তি। বাড়িটি প্রদীপ কুমার দাশের বলে জানালেও এর বাইরে তিনি কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।
ভবনে সামনে চৌধুরী স্টোর নামে একটি ছোট্ট দোকান। এই দোকানে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, প্রদীপের ঘটনার পর থেকেই তার স্ত্রী চুমকিকে এ এলাকায় আর দেখা যায়নি। তিনি কোথায় আছেন কেউ বলতে পারেন না।
ভবনের মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অরুন কর্মকার নামের অপর এক ব্যক্তি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘লক্ষীকুঞ্জে এখন ভাড়াটিয়া ছাড়া আর কেউ থাকেন না। ছয় তলা এই ভবনে ১২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এর মধ্যে একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন প্রদীপের পরিবার। বাকি ১১টি ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া। প্রদীপ টেকনাফ থানার ওসি থাকার সময় মাঝেমধ্যে এখানে আসতেন। দু’একদিন থেকে আবার চলে যেতেন। বর্তমানে এই ভবনে প্রদীপের কোনো স্বজন থাকেন না।’
শীমুল চন্দ্র দাশ নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘লক্ষীকুঞ্জের প্রতিটি ফ্ল্যাট মাসিক ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া। প্রতি ফ্ল্যাটেই ভাড়াটিয়া আছে। নগরীর প্রাইম লোকেশনে হওয়ায় এই ফ্ল্যাটগুলোর চাহিদা এবং ভাড়া দুটোই বেশি।’
আরও পড়ুন- প্রদীপের ফাঁসির রায়, স্ত্রী চুমকি কোথায়
দুদক সূত্র জানায়, লক্ষীকুঞ্জ ভবনটি প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারণের নামে। দুদকে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে চুমকি তার স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে এই ভবনটিকে দেখিয়েছেন। সম্পদ বিবরণীতে ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা মূল্যের চার শতক জমি ও জমিটিতে এই ভবনটি নির্মাণ করতে ১ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে বলে দুদকের কাছে হিসাব বিবরণীতে জমা দেওয়া হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, প্রায় চার কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলার এজাহারে বলা হয়, স্বামী ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থ স্থানান্তর; হস্তান্তর ও রূপান্তরপূর্বক একে-অপরের সহযোগিতায় ভোগদখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন চুমকি। মামলা হওয়ার পর থেকেই চুমকি পলাতক আছেন।