হত্যাকাণ্ডের ৭ বছর পূর্ণ হলেও গাইবান্ধায় পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসীদের বিচার হয়নি। এখনো থামেনি শোকার্ত পরিবারের স্বজনদের কান্না। মনে হলেই এখনো বুক চাপড়ে চিৎকার করে কাঁদেন। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার বিলম্বের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের দাবী, মৃত্যুর আগে তারা আগুন সন্ত্রাসীদের বিচার দেখে যেতে চান ।
২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রাত ১১ টার দিকে পুলিশ পাহারায় গাইবান্ধা থেকে ঢাকার উদ্যেশ্যে যাচ্ছিলো নাপু এন্টার প্রাইজের যাত্রীবাহী বাস।
বাসটি শহরের অদুরে সাহাপাড়া পর্যন্ত গেলে চলন্ত বাসের জানালা দিয়ে দুর্বত্তরা পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে। এতে বাসের ভেতর দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। আগুনে পুড়ে বাসের মধ্যেই শিশু নারীসহ ঘটনাস্থলে ৪ জন ও পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৪ জন মারা যান। আহত হন প্রায় ৩৫ জন।
আহতরা দীর্ঘদিন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে ফিরে আসেন পঙ্গুত্ব নিয়ে। তারা এখনো স্বাভাবিক কাজ কর্ম করতে পারেন না।
ওই বাসের যাত্রী ছিলেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সীচা গ্রাম থেকে দিনমজুর সৈয়দ আলী। তিনি তার বউ ছেলে মেয়েকে বাড়িতে রেখে ঢাকা রওনা দেন। ঢাকায় তিনি রিকশা চালাতেন। জমানো টাকা মাস শেষে বাড়িতে পাঠাতেন। এই টাকায় তার মা শাবানা, স্ত্রী ইসমা বেগম, মেয়ে শান্তিসহ ৬ জনের দুবেলা খাবার জুটতো। মেয়ে শান্তি পড়ালেখা করতেন স্থানীয় স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে। কিন্তু সেদিনের পেট্রোল বোমায় দিনমজুর সৈয়দ আলী প্রাণ হারান। এরপর মেয়ে শান্তির পড়ালেখা আর বেশি দূর এগোয়নি। বাড়ির উঠোনে তার বাবার কবর হয়। পোড়া দেহটাও দেখতে দেওয়া হয়নি।
বাবার কবরের সামনে বসে শান্তি আজো কাঁদেন। আর বলেন, আমি যতো দিন বেঁচে থাকবো বাবার হত্যাকারীদের বিচার চেয়েই যাবো। হত্যাকাণ্ডের ৭ বছর পূর্ণ হলো অথচ বিচার হলোনা। এর চেয়ে বড় কষ্টের আর কি হতে পারে।
বাসে পেট্রোল বোমা নিহত শিশু শিল্পি দাসের মা সাধনা রানী বলেন, সেদিন আমার মেয়েকে আমি পাইনি। পেয়েছি তার পুড়ে যাওয়া দেহ। তাকে আমরা চিনতে পারিনি। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
সাধনা রানী বলেন, আমরা কি অপরাধ করেছিলাম। আমরা তো পেটের খাবার যোগাড় করতে বাসে উঠে যাচ্ছিলাম । কিন্তু আমার কোলের শিশুকেও ওরা পুড়িয়ে মারলো। আমরা অর্ধদগ্ধ অবস্থায় আগুনের পোড়া স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে বেঁচে আছি।
আগুন সন্ত্রাসের শিকার আশরাফুল, শাজাহান আলী, রফিকুল ইসলাম এখনো আহত। আগুনের ভয়াল স্মৃতি মনে হলে দুচোখ বেয়ে পানি পড়ে তাদের । শাজাহান আলী বলেন, আমি বেঁচে গেছি। কিন্তু আমার পাশের যে ৮ জন মরে গেছে তাদের বিভৎস ছবি চোখে ভেসে ওঠে, তখন মাথা ঠিক থাকেনা ।
পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ে ৮ জনের মৃত্যুর ঘটনায় গাইবান্ধা থানার তৎকালীন এসআই মাহবুবুর রহমান বাদী হয়ে ৭৭ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। চার্জশিটও দাখিল করা হয়। এর মধ্যে ১ নম্বর আসামিসহ ৪ জন আসামির মৃত্যু হয়। অপর ৭৩ জন অভিযুক্ত জামিনে বেরিয়ে গেছেন।
গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদার রহমান বলেন, বিষয়টি দীর্ঘদিন আগের। তাছাড়া অভিযুক্তরা জামিনে বেরিয়ে তাদের আপন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছে।
পাবলিক প্রসিকিউটর সাইফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, মামলার অভিযুক্তরা সবাই জামায়াত শিবির ও বিএনপির নেতাকর্মী । তারা উচ্চ আদালতের জামিনে আছেন । মামলার চার্জ গঠন করা হয়েছে। গাইবান্ধা জেলা জজ আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।