সাতক্ষীরার সাত উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে বরই চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। অল্প সময়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে বরইয়ের আবাদ। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া এই ফল চাষে উপযোগী। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত বরই যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। প্রতি মণ বরই পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা দরে।
এর আগে প্রতি মণ বরই বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা দরে। সরকার বরই চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা করায় অন্য বছরের তুলনায় এবছর ভালো ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় ৬৫৪ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার বরইয়ের আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৪০ হেক্টর, কলারোয়া উপজেলায় ৩২৫ হেক্টর, তালা উপজেলায় ১৬০ হেক্টর, দেবহাটা উপজেলায় ৫ হেক্টর, কালিগঞ্জ উপজেলায় ২০ হেক্টর, আশাশুনি উপজেলায় ১৫ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
চাষিরা জানান, জেলায় এসব বরইয়ের মধ্যে রয়েছে বাউকুল, আপেল কুল, নাইন্টি কুল, নারকেল কুল, ঢাকা-৯০ কুল, বিলাতি কুল মিষ্টি কুল ও বলসুন্দরী কুল। প্রতি বিঘায় ৭০ থেকে ৮০ মণ উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। এ জেলার উৎপাদিত বরই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে খুলনা, গোপালগঞ্জ, ঢাকা ও চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়ে থাকে।
সাতক্ষীরার কয়েকজন বরই চাষি জানান, প্রতি বিঘা জমিতে বরই চাষ করতে খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সেখানে প্রতি বিঘা কুল বিক্রি হবে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। প্রতি দিন ১২-২০ জন শ্রমিক দৈনিক কাজ করছেন। সরকার যদি তাদের কৃষি অফিসের মাধ্যমে সভা-সেমিনার এবং সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করে, তাহলে তারা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে পারবেন। বিদেশে বিপণন করতে পারলে বরইয়ের দাম বাড়বে।
কলারোয়া উপজেলা সদরের চাষি মোহাম্মদ সুলতান সরদার বলেন, ‘চলতি মৌসুমেও ৪ বিঘা পরিমাণ জমিতে আপেল কুল চাষ করেছি। উৎপাদন খরচ তুলনামূলক অনেক কম হওয়ায় আমাকে দেখে অনেকেই বরই চাষে আগ্রহী হয়েছেন। গত বছর করোনায় বরইয়ের দাম ভালো পাইনি। এবারও করোনায় দাম পাচ্ছি না। ভাবছি বরই চাষ ছাড়তে হবে।
তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা এলাকার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আগের বছরের তুলনায় এবছর কুলের চাষও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলনও বেশ ভালো পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম দিকে পাইকারি ৭০-৮০ টাকা দরে প্রতি কেজি বিক্রি করেছি। বাজারে দাম ভালো পেলে কৃষকরা লাভবান হবেন ও কুল চাষে আরও আগ্রহী হবেন।
তিনি বলেন, ‘প্রতি বিঘা জমি ২৫ হাজার টাকায় ‘হারি’ নিয়ে কুল চাষ করেছি। কিন্তু ভালো দাম না পেয়ে হতাশ হয়েছি। প্রতি কেজি কুল এখন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।’
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নূরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় গত দুই দশক থেকে সাতক্ষীরা জেলায় বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ শুরু হয়েছে। সরকার চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা করায় অন্য বছরের তুলনায় এবছর বেশি চাষ করা হয়েছে। তবে এখন শেষ সিজনে কুলের দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।’
কৃষিবিদ আরও বলেন, ‘গেলো মৌসুমে জেলায় কুল চাষ হয়েছিল ৫৫০ হেক্টর জমিতে। কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় জেলার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কুল চাষ।’