এক একে সাজঘরে তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুউল্লাহ রিয়াদসহ দলের ৬ ব্যাটসম্যান। ২১৬ রানের লক্ষ্যও তখন মনে হচ্ছিল পাহাড়সম। কারণ, স্কোরবোর্ডে পুঁজি যে মাত্র ৪৫! খোদ অধিনায়ক তামিম ইকবালও বিশ্বাস করেননি তারা জিতবেন। কিন্তু দুই তরুণ আফিফ হোসেন ও মেহেদি হাসান মিরাজ যে উল্টে দিয়েছেন পাশার দান।
বড়দের ব্যর্থতার দিনে ছোটরা দলের ভার নিয়েছেন নিজের কাঁধে। থেমেছেন একেবারের জয়ের বন্দরে এসে। রেকর্ড গড়া জুটি গড়ে আফিফ-মিরাজ লিখেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনন্য অর্জনের এক মহাকাব্য। আফগানদের বিপক্ষে এমন জয় দিয়ে শুরুর পর বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকারই কথা। ইতোমধ্যে নিশ্চিত হয়ে গেছে সিরিজও। এখন তৃতীয় ম্যাচে জিতে ওয়ানডে সুপার লিগে নিজেদের অবস্থান আরও পাকাপোক্ত করাই লক্ষ্য লাল সবুজের প্রতিনিধিদের।
তৃতীয় ও শেষ ম্যাচের আগের দিন রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ঐচ্ছিক অনুশীলনে এসে মিরাজ শুনিয়েছেন তাদের আত্মবিশ্বাসের গল্প। জানিয়েছেন সাকিব-তামিমদের দেখেই তাদের আত্মবিশ্বাস জেগেছে মনে প্রাণে। তারা বহু ম্যাচে হাসিয়েছেন বাংলাদেশকে, এবার নিজেদের পালা; এমন মনোভাব থেকেই যেন মিরাজরা এঁকেছেন জয়ের চিত্রকল্প।
মিরাজ বলেন, ‘তাদেরকে দেখেই তো শিখি। যারা অভিজ্ঞ আছেন তারা বাংলাদেশকে অনেক বড় অর্জন এনে দিয়েছেন। আজ আমরা বাংলাদেশের যে অবস্থান আছে এটাতে অবশ্যই তাদের অবদান দিতে হবে। তারা যেভাবে বাংলাদেশকে একধাপ উপরে নিয়েছেন। তো আমরা তাদের দেখেই শিখি।’
‘যতটা তাদের দেখে শিখবো সেটা আমাদের ক্যারিয়ারের জন্যই ভালো। অবশ্যই তারা অনেক এমন ম্যাচ জিতিয়েছেন। আমরা ওই সময় চিন্তা করতাম আমরাও যদি সুযোগ পাই তবে আমরাও চেষ্টা করবো ম্যাচ জেতাতে। তো ওই আত্মবিশ্বাস ছিল মাঠের মধ্যে। আমাদের যখন ৫০ হয়ে গেল তখন নিজেদের বলছিলাম যে আমরা যদি ম্যাচ না জিতি তবে এই ৫০ এর কোন দাম থাকবে না। যদি জিতে যাই তবে এটা আমাদের জন্য ভাল একটা অর্জন হবে’-আরও যোগ করেন মিরাজ।
প্রথম ওয়ানডেতে আফগানদের দেওয়া ২১৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাংলাদেশ ৪৫ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে। এরপর ১২তম ওভার থেকে শুরু হয় আফিফ-মিরাজের গল্প। দুজনে থেমেছেন সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়ে (১৭৪)। বাংলাদেশ জয় পায় ৪ উইকেটে।
মিরাজ পরিচয় দিয়েছেন বুদ্ধিমত্তারও। জানিয়েছেন জাতীয় দলে খেলতে হলে পারফর্ম করতে হবে। সিনিয়র-জুনিয়র কোনো অজুহাত ধোপে টিকবে না।
‘জাতীয় দলে পারফরম করেই খেলতে হবে। তরুণ বলতে অভিজ্ঞতার দিক থেকে তরুণ। কিন্তু জাতীয় দলে জুনিয়র-সিনিয়র কোন অজুহাত দিতে পারবেন না। আমি যদি পারফর্ম না করি তাহলে আমরা জায়গায় অন্য কেউ আসবে। দিন শেষে নিজেকে যতো জলদি গুছিয়ে নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিবো ততো জলদি আমি সফল হবো ও আমার ক্যারিয়ারও বড় হবে।’
তবে মিরাজরা সব সময় পাশে পাচ্ছেন দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের, ‘অবশ্যই সিনিয়ররা আমাদের ব্যাকআপ করে, কথা বলে। উনারা চায় আমরা জুনিয়ররা যেন পারফর্ম করি। তাহলে ওনাদের কাজ সহজ হয়। আমরা জুনিয়ররা পারফর্ম করলে দলের রেজাল্টের ব্যাপারটা ভালো হয়।’