দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট দলে ফিরলেন তামিম ইকবাল খান ও সাকিব আল হাসান। ওয়ানডে দলে প্রথমবার ডাক পেয়েছেন পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ।
তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট খেলতে ১২ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকা যাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দ্বিপক্ষীয় সিরিজ শুরু হবে ১৮ মার্চ ওয়ানডে দিয়ে৷ ৩১ মার্চ শুরু হবে টেস্ট সিরিজ।
তামিম সবশেষ টেস্ট খেলেছিলেন গত বছরের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাল্লাকেল্লেতে। এরপর ইনজুরির কারণে পাকিস্তান সিরিজ ও নিউ জিল্যান্ড সফরে খেলা হয়নি তার। সাকিব আল হাসান ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকায় খেলেছিলেন শেষ টেস্ট। এরপর নিউ জিল্যান্ড সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন অতি জরুরী পারিবারিক কারণে।
সাকিবের দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট খেলা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। আইপিএলের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের ছুটি চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আইপিএলে তাকে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি দলে নেয়নি। ফলে তার জাতীয় দলে খেলার সম্ভাবনা জেগেছিল।
কিন্তু তারপরও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাঁহাতি অলরাউন্ডার খেলবেন কি না তা নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শেষে বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন জানান, সাকিবের টেস্ট দলে না থাকার কোনো কারণ দেখেন না তিনি। একই সঙ্গে নিশ্চিত করেন, সাকিব টেস্ট খেলবেন।
দুই টেস্টের জন্য নেওয়া হয়েছে ১৮ জনকে। নাঈম শেখ ও ফজলে মাহমুদ বাদ পড়েছেন। নাঈমের অভিষেক হয়েছিল ক্রাইস্টচার্চে। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে আউট হন। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪ রানের ফেরেন। ফজলে রাব্বীকে নেওয়া হয়েছিল সাকিবের পরিবর্তে। কিন্তু ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি। এবার সাকিব ফেরায় তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তিন ওয়ানডের জন্য ১৬ জনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সবশেষ আফগানিস্তান সিরিজ থেকে কেউ বাদ পড়েননি। কেবল নেওয়া হয়েছে খালেদ আহমেদকে। ৩৪ লিস্ট এ ম্যাচে ২৯.০৮ গড়ে ৫০ উইকেট নেওয়া খালেদ গত মার্চে আয়ারল্যান্ড ইমার্জিং দলের বিপক্ষে শেষ পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেট খেলেছিলেন। বিপিএলে সাত ম্যাচে ১০ উইকেট পেয়েছিলেন ডানহাতি পেসার।
করোনা পরিস্থিতিতে ওয়ানডে ও টেস্ট দল একই সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করবে। তবে, সেখানে পৌঁছে দুই দল আলাদা হয়ে যাবে। ওয়ানডে দল জোহানসবার্গের কাছাকাছি এবং টেস্ট দল কেপটাউনে চলে যাবে। সেখানেই মুমিনুল হক, সাদমান ইসলামদের টেস্ট প্রস্তুতি হবে।
গ্যারি কারস্টেনের নিজস্ব ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে চলবে অনুশীলন। সেখানে কারস্টেন তিন দিন বাংলাদেশকে সময় দেবেন। দুই সপ্তাহের ক্যাম্পে মুমিনুলদের সঙ্গে স্থানীয় স্টাফ ছাড়াও থাকবেন ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ প্রথম সফর করে ২০০২ সালে, সর্বশেষ ২০১৭ সালে। এ সময়ে বাংলাদেশ ৯ ওয়ানডে ও ৬ টেস্ট খেলেছে। স্বাগতিকদের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিততে পারেনি কখনো।
এর আগে তিন বারের সফরে বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার ঐতিহাসিক ভেন্যুতে খেলার সুযোগ পায়নি। পচেফস্ট্রুম, ব্লুমফন্টেইন, সেঞ্চুরিয়ান ও ইস্ট লন্ডনে টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। এবারই প্রথম তারা টেস্ট খেলবে ঐতিহাসিক ডারবান ও ১৩৩ বছরের পুরোনো স্টেডিয়াম পোর্ট এলিজাবেথে। এছাড়া, সেঞ্চুরিয়ানে দুটি ও জোহানেসবার্গে একটি ওয়ানডে খেলবে বাংলাদেশ।
১৮ মার্চ দিবারাত্রির প্রথম ওয়ানডে হবে সেঞ্চুরিয়ানে। একদিন বিরতির পর জোহানেসবার্গের ইম্পেরিয়ালের ওয়ান্ডারার্সে হবে দ্বিতীয় ম্যাচ। এর আগে ২০০৩ বিশ্বকাপে কেনিয়ার সঙ্গে জোহানেসবার্গে একটি ওয়ানডে খেলেছিল বাংলাদেশ। যে ম্যাচে ৩২ রানে বাংলাদেশকে হারিয়েছিল কেনিয়া। শেষ ওয়ানডে খেলতে আবার সেঞ্চুরিয়ানে যেতে হবে দুই দলকে। ম্যাচটা হবে ২৩ মার্চ।
আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম টেস্টটি হবে ডারবানে। ১৯৪৩ সালে খুলে দেওয়া এই স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ বাদে এশিয়ার সবগুলো দেশই টেস্ট খেলেছে। বাংলাদেশ এবার প্রথম টেস্ট খেলবে। ৩১ মার্চ ম্যাচটা শুরু হবে।
পোর্ট এলিজাবেথের সেন্ট জর্জ পার্ক গ্রাউন্ডে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ইংল্যান্ডের সঙ্গে ১৮৮৯ সালে। ১৩৩ বছরের পুরোনো স্টেডিয়ামে এবারই প্রথম পা রাখতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ৮ এপ্রিল থেকে শুরু হবে সফরের শেষ ম্যাচ।
ওয়ানডে স্কোয়াড: তামিম ইকবাল, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, আফিফ হোসেন ধ্রুব, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, ইবাদত হোসেন চৌধুরী, নাসুম আহমেদ, ইয়াসির আলী চৌধুরী, মাহমুদুল হাসান জয় ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ।
টেস্ট স্কোয়াড: মুমিনুল হক, তামিম ইকবাল, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, ইয়াসির আলী চৌধুরী, তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, আবু জায়েদ চৌধুরী রাহী, ইবাদত হোসেন, শরিফুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, সাদমান ইসলাম ও কাজী নুরুল হাসান সোহান।