সাতসতেরো

সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু 

একাত্তরের ৮ মার্চ ছিলো সোমবার।  ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর ৮ মার্চ থেকে শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব। 

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে যায়। দিনরাত ঝটিকা মিছিল সমগ্র শহর প্রদক্ষিণ করে। 

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় তাজউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সকল কার্যাবলীর ওপর বিশেষ নজর রাখা শুরু হয়।

রেডিও-টেলিভিশনের কর্মীদের দাবির মুখে সকাল ৮টায় রেডিওতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার করতে বাধ্য করা হয়। ভাষণ প্রচারের পর রেডিও-টিভির সাধারণ কর্মীরা কাজে যোগ দেন। 

অন্যদিকে এদিন রাওয়ালপিন্ডিতে ৮ উর্ধতন সামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে রুদ্ধদ্বার মিটিং করেন ভুট্টো। এ খবরও দ্রুত পেয়ে যান বঙ্গবন্ধু। এ সময় ঢাকায় এবিসি টেলিভিশনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন- ‘কারোরই আগুন নিয়ে খেলা উচিত নয়।’

ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বেশি প্রাধান্য দেন। এ সময়ে জেনারেল ইয়াহিয়া খান রাওয়ালপিন্ডিতে ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিংয়ে পূর্ব পাকিস্তানে হত্যাযজ্ঞের প্ল্যান চূড়ান্ত করেন।

এদিকে পল্টনে সমাবেশ করে বঙ্গবন্ধুকে বিনা শর্তে সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দেন মওলানা ভাসানী। অপরদিকে নতুন গবর্নর টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের দ্রুত দেশত্যাগের নির্দেশ দেন। এ সময়ে বিদেশি সাংবাদিকরা বিশেষ অনুমতি নিয়ে থাকতে চাইলে প্রথমে আপত্তি ও পরে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়। 

কার্যত তখন নীলনকশার জাল সব ঠিকঠাক, বাকি শুধু গণহত্যার অভিযান। আর এ খবরও দ্রুত পেয়ে গেলেন বঙ্গবন্ধু। পরিস্থিতি বিবেচনায়, এইদিন বঙ্গবন্ধু প্রয়োজনীয় কিছু নির্দেশনা দেন তাঁর ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের।

৭ মার্চের ভাষণে সংগ্রামী জনতার উদ্দেশে প্রদত্ত ১০টি নির্দেশ আজ থেকে হুবহু অনুসৃত হতে থাকে। বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে থাকে। মার্চের ৮ তারিখ থেকে একটানা ২৫ তারিখ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকে বাংলাদেশ। 

একাত্তরের এইদিন সম্পর্কে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ‘একাত্তরের দিনগুলি’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সম্পর্কে লিখেন- ‘কাল রাতে রেডিও বন্ধ থাকার পর আজ সকাল থেকে আবার চালু হয়েছে । সকাল সাড়ে আটটায় শেখ মুজিবের বক্তৃতা প্রচারিত হল।’