মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়ার অনুভূতি অন্যরকম। কিন্তু মা হওয়ার পরই সন্তানকে সময় দেওয়ার চ্যালেঞ্জও নিতে হয়। বিশেষ করে খেলোয়াড়দের জন্য এই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় কঠিনতর। কিন্তু অনেকেই এই বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাচ্ছেন, পাচ্ছেন সাফল্যও। এমনকি আগের চেয়েও বেশি সফলতা ধরা দিচ্ছে তাদের কাছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিনে এমন কয়েকজন সুপারমমকে নিয়ে ছোট ছোট গল্প তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য-
বিসমাহ মারুফ
পাকিস্তানের প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে মা হওয়ার পরও খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন বিসমাহ মারুফ। স্বামীর উৎসাহ ও সহযোগিতায় ক্রিকেটারের মর্যাদা এখনো ধরে রেখেছেন। এমনকি এবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপে নেতৃত্বও দিচ্ছেন জাতীয় দলকে।
এরই মধ্যে সন্তান কোলে নিয়ে টিম বাস থেকে নেমে স্টেডিয়ামে তার ঢোকার ছবি আলোচিত। প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ ভারতের খেলোয়াড়রা ম্যাচ শেষে ৬ মাসের ফাতিমাকে নিয়ে খুনসুটিতে মেতে উঠেছিলেন।
দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তো বিশ্বকাপের প্রথম হাফ সেঞ্চুরিও করে ফেললেন বিসমাহ। গ্যালারিতে ছিল তার ছোট্ট সন্তান। তার সামনে ফিফটি করা যেন গৌরবান্বিত করেছে বিসমাহকে।
সেরেনা উইলিয়ামস
টেনিসের উন্মুক্ত যুগে সর্বোচ্চ ২৩টি গ্র্যান্ড স্লামের শেষটি জিতেছেন ২০১৭ সালে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে বড় বোন ভেনাস উইলিয়ামসকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন সেরেনা উইলিয়ামস।
মাস দুয়েক পর সেরেনা জানান, তিনি ২০ সপ্তাহের গর্ভবতী। মানে গর্ভে ৯ সপ্তাহের সন্তান নিয়েই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে কাঁপিয়ে দিয়েছেন!
সেপ্টেম্বরে তিনি জন্ম দেন এক মেয়ের, নাম দেন অ্যালেক্সিস অলিম্পিয়া ওহানিয়ান জুনিয়র। সিজারিয়ান সেকশন ডেলিভারিতে গুরুতর সমস্যার কারণে তার কোর্টে ফিরতে দেরি হয়।
মা হওয়ার পরও যে ফর্মে এতটুকু ধার কমেনি, তার দৃষ্টান্ত তৈরি করেন পরের বছর ফিরে। মা হওয়ার ১০ মাস পর উইম্বলডনের ফাইনাল খেলেন। ওঠেন ইউএস ওপেনের ফাইনালেও। কিন্তু পারেননি ট্রফিটা হাতে নিতে।
কিম ক্লিস্টার্স
একক ও দ্বৈতের সাবেক এক নম্বর টেনিস খেলোয়াড়। কিম অ্যান্তোনি লোদে ক্লিস্টার্স দুই সন্তান জ্যাক লিওন লিঞ্চ ও জাডা এলি লিঞ্চের মা। সব মিলিয়ে ৪১ ডব্লিউটিএ একক ও ১১ ডব্লিউটিএ দ্বৈত শিরোপা তার নামের পাশে।
চারটি গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন ক্লিস্টার্স, যার মধ্যে তিনটি ইউএস ওপেন। বেলজিয়ান এই টেনিস তারকাকে তার প্রজন্মের সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী বলা যায়। ২০০৮ সালে তার মেয়ে জ্যাডা এলি লিঞ্চের জন্ম হয়। মা হওয়ার পর টেনিস ক্যারিয়ারে তার মোড় ঘুরে যায় এবং নানা চ্যালেঞ্জ জিতে নতুন উচ্চতায় পৌঁছান। প্রথম সন্তান জন্মের ১৮ মাস পর ২০১০ সালে জেতেন ইউএস ওপেন। ১৯৮০ সালের উইম্বলডেন ইভোন্নে গুলাগং কোলির পর প্রথম মা হিসেবে গ্র্যান্ড স্লাম জেতেন ক্লিস্টার্স। পরের বছর প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ওপেন শিরোপাও।
ডারা টোরেস
সাঁতারের সবচেয়ে নজরকাড়া একজন ডারা টোরেস। সাবেক এই অলিম্পিক সাঁতারু ১২ অলিম্পিক পদক ও চারটি স্বর্ণপদক জেতেন। তিনটি ইভেন্টে প্রাক্তন রেকর্ডধারীও। পাঁচটি অলিম্পিক গেমসে প্রতিনিধিত্ব করা প্রথম সাঁতারু ডারা।
প্রথম সন্তান জন্ম দেওয়ার ১৬ মাস পর ৪১ বছর বয়সে তিনি ইতিহাস গড়েন। সবচেয়ে বয়স্ক সাঁতারু হিসেবে মার্কিন অলিম্পিক দলে জায়গা করে নেন এবং ২০০৮ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিক্পিমে ৪*১০০ মিটার ফ্রি স্টাইল রিলেতে রৌপ্য জেতেন।
বর্তমানে সাঁতারের পেশাদার ক্যারিয়ার থেকে অবসর নিয়েছেন। এখন প্রেমিক ডেভিড হফম্যান ও সন্তান টেসা গ্রেসকে নিয়েই কাটছে তার জীবন।
শেলি-অ্যান ফ্রেজার-প্রাইস
২০০৮ ও ২০১২ সালের স্প্রিন্টে অলিম্পিক স্বর্ণ জয়ী। টানা তৃতীয়বার সোনার পদক গলায় ঝুলাতে পারেননি ২০১৬ রিও অলিম্পিকের ১০০ মিটারে হেরে, পান ব্রোঞ্জ।
পরের বছরের শুরুতে এই জ্যামাইকান স্প্রিন্টার জানান, তার গর্ভে সন্তান। ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড থেকে ছুটি নিচ্ছেন। লন্ডনে অনুষ্ঠিত ২০১৭ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপসে ১০০ মিটারের ফাইনাল দেখেন টিভিতে, পরের দিন জন্ম দেন ছেলে জিয়নকে।
সদ্য মা হওয়ায় তিনি অবসর নিচ্ছেন, এমন গুঞ্জনকে থামিয়ে ১০ সপ্তাহের মধ্যে ট্রেনিংয়ে ফেরেন। ২০১৯ সালে দোহায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপসের ৪*১০০ রিলেতে স্বর্ণ জিতে দেখান তিনি ফুরিয়ে যাননি। টোকিও অলিম্পিকের একই ইভেন্টে জেতেন স্বর্ণ। তবে ১০০ মিটারে পান রৌপ্য।