সাতসতেরো

ঢাকায় শুরু হয় গ্রুপে গ্রুপে নৈশকালীন টহল

ঢাকায় শুরু হয় গ্রুপে গ্রুপে নৈশকালীন টহল

একাত্তরে উত্তাল মার্চের ১১ মার্চ ছিলো বৃহস্পতিবার। এইদিন ছিলো দ্বিতীয় পর্যায়ের অসহযোগ আন্দোলনের  চতুর্থ দিন। সারাদেশের মানুষ এইদিনও বঙ্গবন্ধুর ডাকে শান্তিপূর্ণভাবে সর্বাত্মক অসহযোগ পালন করে। 

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সর্বত্র ‘সংগ্রাম পরিষদ’ গড়ে তোলার কাজ চলতে থাকে। দলের স্বেচ্ছাসেবকগণ বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে রাজধানীতে নৈশকালীন টহল কার্যক্রম শুরু করে। 

সাত মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মতো সরকারি দপ্তরগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনে চলে। সর্বত্র এটিই দৃশ্যমান যে, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সমগ্র বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে। সকল শ্রেণীপেশার মানুষ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যাচ্ছেন।

বর্ষীয়ান মজলুম নেতা মওলানা ভাসানী এইদিন টাঙ্গাইলে এক জনসভায় সকল রাজনৈতিক পক্ষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সাত কোটি বাঙালীর নেতা শেখ মুজিবের নির্দেশ পালন করুন।

অপরদিকে জাতীয় লীগ প্রধান আতাউর রহমান খান সামরিক সরকারের উদ্দেশে এক বিবৃতিতে বলেন, এক রাষ্ট্রে ও জোয়ালে আবদ্ধ না থাকলেও দুটি স্বাধীন ভ্রাতৃরাষ্ট্র হিসেবে আমরা পরস্পরের এবং বিশ্বের এই অংশের সমৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারবো।

এদিন ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও কূটনীতিকদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে একান্ত বৈঠকে মিলিত হন ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। পাঞ্জাব প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব খুরশীদ হক বৈঠক করেন। বৈঠকে খুরশীদ হক আগের দিন রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে তার বৈঠকের বিস্তারিত বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করেন। 

ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের উপ-আবাসিক প্রতিনিধি মি. কে. উলফ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। বঙ্গবন্ধু তাকে যতদিন খুশি বাংলাদেশে থাকার অনুরোধ করে বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী দেশে গণহত্যা চালানোর পাঁয়তারা করছে। এ অবস্থায় মানবতা রক্ষায় তাদের দেশ না ছাড়তে অনুরোধ করেন।

বরিশালে এদিন কারাগার ভেঙ্গে ২৪ কয়েদী পালিয়ে যায় এবং পুলিশের গুলিতে ২ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়। কুমিল্লাতেও পুলিশের গুলিতে ৫ জন নিহত ও শতাধিক লোক আহত হয়।

যে কোন মূল্যে স্বাধীনতা ঠেকাতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বাঙালীর রক্তের হোলি খেলার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। গোপনে পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানী সামরিক শক্তি ও অস্ত্র-গোলাবারুদ মজুদ করতে থাকে। এই ঘৃণ্য পরিকল্পনার কথা সামরিক বাঙালী অফিসাররা জানতে পেরে তারাও ভেতরে ভেতরে স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে শক্তি-সাহস সঞ্চয় করতে থাকেন।

পূর্ব পাকিস্তান অনেক আগেই পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। একমাত্র সেনা ছাউনি ছাড়া টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া কোথাও পাকিস্তানীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। পুরো দেশ, মানুষ চলছিলো একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ও অঙ্গুলী হেলনে।  শহরগুলোতে প্রতিদিনই মিছিল-মিটিং চলতে থাকে। পাক বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন অনেকে। বাড়তে থাকে শহীদদের তালিকা। একেকটি মৃত্যু বীর বাঙালীর রক্তে প্রতিশোধের ইচ্ছা আরও বাড়িয়ে তোলে।