ক্যাম্পাস

হাসি-কান্নায় ফিনিক্স পাখিদের বিদায়

ছয় বছর পূর্বে এমন দিনে পা রেখেছিলাম পাহাড়ে ঘেরা লালমাটির কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সারাদিন ক্লাস, ক্লাসের ফাঁকে বন্ধুবান্ধবসহ আড্ডা, শালবনবিহার, সামাজিক বনায়ন, লালমাই পাহাড়ে ঘুরাঘুরি, ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ানো এই ভাবেই কেটে গেলো ৬ বছর। শেষ করে ফেললাম স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাঠ। 

অনেক হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখের স্মৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ফরেস্ট অব আর্ডেন, বৈশাখী চত্বর, মুক্তমঞ্চ, ভিসির টং, কৃষ্ণচূড়া রোডসহ ক্যাম্পাসের প্রত্যেকটি আনাচে-কানাচে। দেখতে দেখতেই শিক্ষাজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে গেলো ভাবতেই অবাক লাগে। এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করছিল দীপু, লুবনা, আমজাদ, মিনহাজ, সায়মা, সৌরভ ও মাহবুব।

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করার পর মধুময় দিনগুলোর স্মৃতি হৃদয়ের ফ্রেমে বেঁধে রাখতে গত ২৮ ও ২৯ মার্চ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি দশম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠে শিক্ষা সমাপনী নামক মহানন্দে। তারা তাদের ব্যাচের নাম দিয়েছে ‘টেনথ- দ্য ফিনিক্স’। ফিনিক্স পাখি যেমন আগুনে পুড়ানোর পর ধ্বংসস্তুপের ছাই থেকে বার বার জন্ম নেয়, তেমনি জীবনে শত বাধা বিপত্তি আসলেও সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়াতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তারা।

২৮ মার্চ সকাল ১০টায় কেক কাটার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ফিনিক্স পাখিদের শিক্ষা সমাপনী উৎসব। এরপর শিক্ষক ও বিদায়ী শিক্ষার্থীরা তাদের স্মৃতিরোমন্থন করেন। ছয় বছরের ক্যাম্পাস জীবনের নানা স্মৃতি বিষয়ক একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। টি-শার্ট বিতরণের পর মুক্তমঞ্চ প্রাঙ্গণ সাজে হরেক রকমের রঙের মেলায়। সব শিক্ষার্থীর গায়ে থাকে র্যাগ-ডের স্লোগান সম্বলিত টি-শার্ট। যেখানে সবাই লিখছে মনের না বলা কথা। গানবাজনা, নাচ গান আর হইহুল্লোড়ে মেতে ওঠে মুক্তমঞ্চ। বিকেলে চলে ক্যাম্পাসে প্রিয় মুহূর্তগুলোকে স্মরণীয় করে রাখতে ফটো সেশন। সন্ধ্যা মাতিয়ে  তোলে ফানুশ উড়ানোর মধ্য দিয়ে।

পরদিন ২৯ মার্চ হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গালা নাইট। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গান, কবিতা আবৃত্তি, নাটক, নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে মাতিলে তোলে।

আবেগে আপ্লুত বিদায়ী শিক্ষার্থী আফসারা বিনতে আলম তন্নী অতীতের স্মৃতিচারণ করে বলেন, পহেলা ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ছিল আমাদের ক্যাম্পাস জীবনের প্রথম দিন। এরপর ধীরে ধীরে শুরু হয় খুনসুটি, আড্ডা, হৈচৈ। চোখের সামনে আজও ভেসে ওঠে সেই রঙিন দিনগুলো। দেখতে দেখতে ছয় বছর যে কিভাবে কেটে গেলো বুঝতেই পারলাম না।

এই প্রসঙ্গে তাহমিনা বিনতে কামাল মুক্তা বলেন, স্বপ্ন আর চোখ ভরা সম্ভাবনা নিয়ে প্রাণপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের উচ্চশিক্ষার যাত্রা শুরু করেছিলাম। আজ তার শেষ প্রান্তে এসে আমরা তিলে তিলে টের পাচ্ছি বন্ধু হিসেবে আমরা সবাই পরস্পরের প্রতি কতটা আন্তরিক ছিলাম, কতটা গভীর ছিল আমাদের ভালোবাসা। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটলেও অটুট থাকবে আমাদের বন্ধুত্ব।

জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, শিক্ষা জীবন শেষে কর্মব্যস্ত বাস্তবতায় প্রবেশ করলেও ছয় বছরের বন্ধুত্ব, প্রিয় ক্যাম্পাস, প্রিয় মুখগুলো অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ভালোবাসার গল্পে সারা জীবনের সাথী হয়ে থাকবে। মেনে নিতে কষ্ট হলেও এটাই বাস্তবতা।

লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।