বছরের শুরুতে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউ জিল্যান্ডকে বধ করে সাদা পোশাকে দিন বদলের আভাস দিয়েছিল বাংলাদেশ। তার পরেই দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়েও টগবগে ছিল লাল সবুজ শিবির। ওয়ানডে সিরিজ জয়ে ইতিহাস গড়ার পর টেস্টেও প্রত্যাশা বেড়েছিল কয়েকগুণ। দুই টেস্টের সিরিজে অসহায় আত্মসমর্পণের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হকের মন্তব্য, ‘নিউ জিল্যান্ডে জিতে আমরা টেস্টের এক নম্বর দল হয়ে যাইনি।’
অথচ সিরিজ শুরুর আগেও মুমিনুলের প্রত্যাশার পারদ ছিল অনেক উপরে। আইপিএলের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা দলে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার না থাকায় বাংলাদেশ দলকে এগিয়েও রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু মাঠের লড়াই যে আলাদা বিষয়! ডারবান টেস্টের পর পোর্ট এলিজাবেথেও ভরাডুবি। যেন একই সূত্রে গাঁথা! তাই অধিনায়ক মুমিনুলও ফিরলেন বাস্তবেই।
‘টেস্ট ক্রিকেট এমন একটা খেলা যেখানে আপনাকে প্রতিদিন উন্নতি করতে হবে দলগতভাবে। আপনি এক সেশন ভালো খেললে হবে না, আবার পাঁচদিনের মধ্যে তিনদিন ভালো খেললে হবে না। আপনার পাঁচদিনে পাঁচদিন ভালো খেলতে হবে। আপনি একটা-দুইটা সেশন ভুল করতে পারেন। কিন্তু প্রত্যেকটা সেশন ভালো খেলতে হবে। এসব জায়গায় আমাদের আরো উন্নতি করতে হবে।’- বললেন মুমিনুল।
বাংলাদেশের অধিনায়ক আরো যোগ করেন, ‘আপনারা হয়তো এমনভাবে বলছেন যেন আমরা একটা টেস্ট ম্যাচ জিতে বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দল হয়ে গেছি। আমরা একটা টেস্ট জিতে আগেও যেখানে ছিলাম এখনো সেখানে আছি। হয়তো আপনাদের প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছিল। আমাদের নিজেদেরও হয়তো বাড়ছে। আমাদের আরো উন্নতি করার জায়গা আছে। আরো অনেক জায়গায় উন্নতি করতে হবে।’
ডারবান টেস্টের শেষ দিনে গিয়ে হারে বাংলাদেশ। চারদিন লড়াইয়ে থাকলেও শেষ দিন প্রথম সেশনের প্রথম ঘণ্টাতেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশ। ৫৩ রানে অলআউট হয়ে হারতে হয় ২২০ রানে। পোর্ট এলিজাবেথে আরামে বাউন্স ব্যাকের কথা বলেছিলেন মুমিনুল। কিন্তু এই টেস্টে সেই লড়াইটুকুই করতে পারেনি দল। দক্ষিণ আফ্রিকা ফলোঅনে ফেললে বাংলাদেশ হারতো ইনিংস ব্যবধানেই। দুই ইনিংস মিলিয়ে মুমিনুলরা করতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসের রান। ফল ৩৩২ রানের বিশাল হার।
নিউ জিল্যান্ডে আসা সাফল্য কি অপ্রত্যাশিত? মুমিনুল অবশ্য তা মনে করেন না। এই প্রশ্নে বাংলাদেশ অধিনায়ক বল ঠেলে দিলেন সাংবাদিকের কোর্টেই, ‘এখানের কন্ডিশন আর ওখানের কন্ডিশনে অনেক পার্থক্য। আপনি ফ্লুক (অপ্রত্যাশিত সাফল্য) বলবেন নাকি কী বলবেন এটা কিন্তু আপনার হাতে, আমার হাতে নেই। আর টেস্ট ম্যাচে ৫ দিন খেলাটা ফ্লুক কী না এটা আপনি আমার চেয়ে ভালো জানেন। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের সিচুয়েশন ডিফারেন্ট এখানকারটাও ডিফারেন্ট ছিল। কন্ডিশন কোনোটা আপনি মিলাতে পারবেন না।’
তাহলে মানসিকভাবে পিছিয়ে বাংলাদেশ? মুমিনুল বলেন, ‘জিনিসটা আসলে এইরকম না (মানসিকতার পরিবর্তন প্রসঙ্গে)। কন্ডিশনের সঙ্গে তাড়াতাড়ি মানিয়ে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এরকম না যে আমরা স্পিন উইকেটে খেলি না, আমরা স্পিন উইকেটেই খেলি। প্রথমে যেটা বলেছিলাম আমাদের টিম এক্সিকিউশনে ভুল ছিল।’
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা খুব বাজে শটে আউট হয়েছেন। প্রথম ইনিংসে মুশফিকুর রহিম সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হন। বাংলাদেশ অলআউট হয়ে যায় দ্রুত। দ্বিতীয় ইনিংসে মুমিনুল নিজেই সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হন। লিটন মারতে গিয়ে ফেরেন, ইয়াসিরও ধরা পড়েন মিড উইকেটে উড়িয়ে মারতে গিয়ে।
মুমিনুলের মতে, ‘পরিকল্পনা যা ছিল, হয়তো বাস্তবায়ন ঠিক হয়নি। আমার আর রাব্বির যে আউট ছিল, হয়তো উড়িয়ে মারা ঠিক হয়নি। যেহেতু বল বেশি স্পিন করে। আমার মনে হয়, স্কয়ার অব দ্য উইকেট খেলা ভালো। আগেও বলেছিলাম। তার মানে এই না যে, উড়িয়ে মারতে হবে, শট নিচে রাখতে পারলে ভালো হতো। উপরের অপশন না নিয়ে নিচের অপশন নিলে ভালো হতো।’