ঈদকে সামনে রেখে খুলনাঞ্চলে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে জাল টাকার কারবারি চক্র। শহর ও শহরতলীতে জাল নোট ঈদের বাজারে ছাড়ার চেষ্টা করছে তারা। ইতোমধ্যেই গোয়েন্দা পুলিশ নগরী থেকে ২ লাখ ৮২ হাজার টাকার জাল নোটসহ ৩ জনকে আটক করেছে।
এদিকে, জাল নোট তৈরি ও বিপণনের সঙ্গে জড়িতরা মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা সংস্থার হাতে গ্রেপ্তার হচ্ছে। আবার খুব সহজেই কারাগার থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে ৮০ শতাংশই পুনরায় একই পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র মতে, জাল নোটের কারবারে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হলেও ৮০ শতাংশই জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারো একই পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে ঈদ এলেই এই সিন্ডিকেট সারাদেশে সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে জাল নোটের কারবার করছে কয়েকটি চক্র। এরা খুলনা নগরীর আশপাশের এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে জাল নোটের ব্যবসা করে। ধরা পড়ার ভয়ে তারা এক বাসায় বেশি দিন থাকে না। কয়েক মাস পর পর তারা বাসা বদলে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলে যায়।
এসব চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন মার্কেটে পণ্য কেনাকাটার মাধ্যমে জাল টাকার বিস্তার ঘটায়। সেজন্য তাদের দেওয়া হয় মোটা অঙ্কের কমিশন। ধরা পড়লে তাদের আইনি সহায়তাও দেয় সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
এদিকে, সোমবার খুলনা সদর থানাধীন ১৯ নম্বর ছোট মির্জাপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ ২ লাখ ৮২ হাজার টাকার জাল নোটসহ ৩ জনকে আটক করে। জাল টাকার সব বান্ডিলে এক হাজার টাকার নোট ছিলো।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-সিলেট জেলার লামা গ্রামের আব্দুল বারেকের ছেলে মো. জমির উদ্দিন, বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার মাদারতলা গ্রামের মো. সাঈদ এবং মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ইসলামাবাদ এলাকার মো. ইসলাম মিয়ার ছেলে মো. সানি আহম্মেদ। এরা দীর্ঘদিন ধরে খুলনা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জাল টাকার কারবার করে আসছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার জাল নোটের ব্যবসায়ী মো. জমির জানান, এক লাখ জাল টাকা ৩০ হাজার টাকায় কিনতে হয় তাকে। তিনি এ জাল টাকা গোপালগঞ্জ জেলার একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কেনেন। ওই ব্যবসায়ীকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা প্রেরণ করলে জাল টাকা খুলনায় এক ব্যক্তির মাধমে পাঠিয়ে দেন তিনি। জাল নোটের কারবার তিনি ৪ বছর ধরে করছেন। এর আগেও এ ব্যবসা করতে গিয়ে তিনি পুলিশে কাছে আটক হন বলেও জানান তিনি।
গ্রেপ্তারকৃত জমির জানান, দু’বছর আগে সাঈদ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সানি গত ৫ থেকে ৬ মাস ধরে তাদের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন।
কেএমপি গোয়েন্দা বিভাগের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বিএম নূরুজ্জামান বলেন, ‘ঈদের ভিড়ের মধ্যে মালামাল কিনতে গিয়ে মূলত ওইসব জাল টাকা ব্যবহার করা হয়। ওই জাল টাকা ও আসল টাকার মধ্যে পার্থক্য খুবই সামান্য। আসামিরা বিভিন্ন শপিং মলে বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনার সময় ওই সব জাল টাকা ব্যবহার করতেন। ফলে ভিড়ের মধ্যে বিক্রেতারা টাকা আসল না নকল তা বুঝে উঠার সুযোগ পেতেন না। এই সুযোগটা জাল নোটের কারবারিরা কাজে লাগান। ’
তিনি আরো বলেন, ‘জাল নোট ব্যবসারা মূল হোতা হচ্ছে মো. জমির উদ্দিন। তিনি ৩০ হাজার টাকায় এক লাখ জাল টাকা কেনেন। গ্রেপ্তারকৃতদের পরিবারের সদস্যরাও জানে আসামিরা এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আসামিদের বিরুদ্ধে খুলনা থানায় ১৯৭৪ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ ধারায় মামলা করা হয়েছে।’