জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো একটি মাত্র ব্যাংক শাখার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এতে ফরম পূরণ, ভর্তি ফিসহ টাকা জমা-উত্তোলনের সময় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ দিন যাবত ব্যাংকিং সেবা দিয়ে আসছে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভোগান্তির বিষয়টি অবগত থাকলেও এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে দিনের পর দিন শিক্ষার্থীদের ব্যাংক লেনদেনে ভোগান্তির মাত্রা বাড়ছে।
জায়গা সংকট, কাউন্টার কম, নেটওয়ার্ক সমস্যা, সার্ভার সমস্যা, বুথ থেকে টাকা উত্তোলনে ভোগান্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ব্যাংকের নিত্য দিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অগ্রণী ব্যাংকের এই শাখায় গ্রাহক অনুপাতে অনেক জায়গা কম হওয়ায় তারা সঠিক সার্ভিস দিতে পারছে না। এ ছাড়াও, ব্যাংকে শিক্ষার্থীদের জন্য নেই আলাদা কোনো কাউন্টার। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে পাল্লা দিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। এতে করে তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ব্যাংকের ভেতরে-বাইরে লম্বা সিরিয়াল। ভেতরে জায়গা কম থাকায় বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন সবাই। এদের মধ্যে ছিলেন একদল শিক্ষার্থী। যারা এসেছিলেন পরীক্ষার ফরম পূরণ ও টাকা উত্তোলন করতে।
তারা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিদিন আমাদের এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, অথচ প্রশাসন নীরব। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এই ব্যাংক সার্ভিস আমাদের জন্য অথচ আমরাই সেই সার্ভিস পাচ্ছি না। এভাবে তো আর চলতে পারে না। এত বড় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র একটি ব্যাংক কীভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী অনুপাতে একাধিক ব্যাংক সার্ভিস চালুর দাবি জানাচ্ছি।
জাবিতে বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার, রয়েছেন ৭ শতাধিক শিক্ষক, ২ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী। এত বিশাল সংখ্যক গ্রাহকদের সার্ভিস দিতে এই একটি মাত্র ব্যাংক সার্ভিস যথেষ্ট নয় বলে জানান ব্যাংকে আসা একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারা আরও বলেন, এত বড় একটি বিশ্ববিদ্যালয় অথচ সেখানে ব্যাংক সার্ভিস এত নিম্নমানের কল্পনার বাইরে। মহিলাদের জন্য নেই আলাদা ব্যবস্থা। একসাথে সবাইকে প্রতিযোগিতা করতে হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতি কার্যদিবসে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভর্তি, পরীক্ষা ও লেনদেনের সুযোগ পান শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সপ্তাহে পাঁচ দিন চলে ব্যাংক কার্যক্রম। সব ধরনের অর্থ গ্রহণে মাত্র দুইজন কর্মকর্তা যেমন হিমশিম খাচ্ছেন, তেমনি শিক্ষার্থীদের সময় অপচয় হচ্ছে দ্বিগুণ।
শিক্ষার্থীরা জানান, ব্যাংকের ভেতরে জায়গা খুবই কম, পাশাপাশি কাউন্টার সংখ্যাও কম। মাত্র তিনটি কাউন্টারের মাধ্যমে সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়, যা অনেক ভোগান্তিকর। এ ছাড়াও, নারীদের জন্য নেই আলাদা ব্যবস্থা। তাদেরও একই লাইনে দাঁড়িয়ে প্রতিযোগিতা করতে হয়। তাই নতুন আরও একটি ব্যাংক কার্যক্রম চালুর দাবি জানাচ্ছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, এক ব্যাংকের মাধ্যমে এত বিপুল সংখ্যক গ্রাহক লেনদেন সম্ভব নয়। নতুন ব্যাংককে সুযোগ দেওয়া উচিত।
শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দা ফাহলিজা বেগম বলেন, শিক্ষার্থীদের এই সমস্যাটি সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। আবারও জানলাম। এটা আমরা অবশ্যই প্রশাসনের কাছে উত্থাপন করবো। উৎসব পার্বণের সময় একটু বেশি চাপ পড়ে। শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ব্যাংকের পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকের কার্যক্রম চালুর একটা চিন্তাভাবনা রয়েছে প্রশাসনের। আশাকরি খুব শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।