অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ঘুষ বা দুর্নীতির নয়। এটাকে কালো টাকাও বলা যাবে না। সিস্টেমের কারণে এটা অপ্রদর্শিত অর্থ হয়ে গেছে। পাচারের করা অর্থ দেশে নিয়ে আসলে প্রশ্ন করব না। আমি প্রত্যাশা করব, কেউ এটা নিয়ে প্রশ্ন করবে না। আমরা এটা বাজেটেও বলে দিয়েছি।’
শুক্রবার (১০ জুন) বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন তিনি।
সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘টাকা পাচার হয় না, তা কখনও বলি না। টাকার একটা ধর্ম আছে—যেখানে রিটার্ন বেশি, সেখানে চলে যায়। টাকা সুটকেসে করে কেউ পাচার করে না। এখন ডিজিটাল যুগ, নানা ধরনের ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে পাচার করে। প্রমাণ ছাড়া পাচারের কথা বললে মামলায় আসে না। দেশের ভিতর যারা এসব কাজ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালতে মামলা আছে।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নরওয়েসহ বিশ্বের ১৭টি দেশ এ ধরনের সুযোগ দিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৯.৬ বিলিয়ন পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে এনেছে। আমাদের দেশ থেকেও যদি টাকা পাচার হয়ে থাকে, সেগুলো ফেরত আনার চেষ্টা করছি।’
অতীতে ট্রুথ কমিশন (সত্য ও জবাবদিহিতা কমিশন) বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরত আনার সুযোগ দিয়ে নানা প্রশ্ন করেছিল। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘ট্রুথ কমিশনের কালো টাকা প্রদর্শনের সুযোগ আইন দ্বারা সুরক্ষিত ছিল না। এখন বাজেটে পাচারের অর্থ ফেরত আনার যে কথা বলা হয়েছে, সেটি সংসদের আইন দ্বারা সুরক্ষিত। তাই, এ সুযোগ কেউ গ্রহণ করলে, তাকে কেউ কোনো প্রশ্ন করবে না।’
একই প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ট্রুথ কমিশন যখন গঠন করা হয়েছিল, তখন সাংবিধানিক সরকার ছিল না। আমরা সাংবিধানিক সরকার। সাংবিধানিক সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই, পাচার করা টাকা দেশে নিয়ে আসলে কেউ কোনো প্রশ্ন করবে না।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পিকে হালদার যে পরিমাণ টাকা নিয়ে গেছে, তা ভারত সরকার ফেরত দেবে বলে আমাদেরকে জানিয়েছে। তাছাড়া, কানাডাও সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেসব দেশ থেকে টাকা পাচার করে সে দেশে নিয়ে গেছে, সেগুলো ফেরত দেবে। তাই, পাচার করা অর্থ এখনই দেশে আনার সময়। আমার বিশ্বাস, এই সুযোগ সবাই গ্রহণ করবে।’
অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো নিরুৎসাহিত করা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দিয়ে বলেছিলাম, এই প্রণোদনা গ্রহণ করতে কোনো প্রশ্ন করা হবে না। আমরা প্রশ্ন করিনি। আগামীতেও প্রশ্ন করা হবে না। ঠিক তেমনই পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনলেও কোনো প্রশ্ন করা হবে না।’