রাজনীতি

প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবতাবিবর্জিত: বিএনপি

প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘বাস্তবতাবিবর্জিত’ অভিহিত করে বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এটা কেবলমাত্র সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্য করা হয়েছে।’

শনিবার (১১ জুন) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে আনুষ্ঠানিক এ প্রতিক্রিয়া জানান মির্জা ফখরুল।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই বাজেট কোনো অর্থেই সাধারণ মানুষের বাজেট নয়। এটা স্রেফ ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের বাজেট। এবারের বাজেট সম্পূর্ণ বাস্তবতাবিবর্জিত। এটি শুধুমাত্র সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্যই করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘পাচার করা অর্থ নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা কিংবা বিদেশে ভোগ করার বৈধতা দিতেই এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। আরও পরিষ্কার অর্থে বললে, সরকারের লুটেরা মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের অর্থপাচারের সুযোগ করে দিতেই এটা করা হয়েছে। অথচ চাল, ডাল, লবণ, চিনি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির মূল্য হ্রাসের কোনো কার্যকরী কৌশল না নিয়ে শুধু নিজেদের বিত্ত-বৈভব বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ বাজেট প্রণীত হয়েছে।’

পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরাতে ‘কর ছাড়’ এর প্রস্তাবকে আইন পরিপন্থী অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘এই প্রস্তাব কেবল অনৈতিক নয়, এটা রীতিমতো আইনের সাথে সাংঘর্ষিক এবং দুর্নীতি ও অর্থপাচারকে ক্ষমা ঘোষণার শামিল। এতে বর্তমানে চলমান অর্থপাচারের মামলাগুলোর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। অর্থ পাচারকারীরা আরও উৎসাহিত হবে, টাকা পাচারের প্রবণতা আরও বাড়বে। এটা অন্যায়, অপরিণামদর্শী ও আত্মঘাতী পদক্ষেপ।’

‘যেখানে পাচারকারীদের শাস্তির আওতায় আনা প্রত্যাশিত, সেখানে পাচারকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, এটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের তথাকথিত জিরো টলারেন্স নীতির সাথে সাংঘর্ষিক এবং অসাংবিধানিক।’

প্রস্তাবিত বাজেটের নানা দিকের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এই বাজেট হচ্ছে অব দ্য বিজনেসম্যান, বাই দ্য বিজসেনম্যান এবং ফর দ্য বিজনেসম্যান। অর্থাৎ এটি ব্যবসায়ীবান্ধব বাজেট। জনকল্যাণের কোনো কথা এতে স্থান পায়নি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এবারের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি, স্বস্তি পায়নি মধ্যবিত্তরা। বাজেটে যেসব পণ্যের আমদানি কর বাড়ানো হয়েছে সেগুলোর ভোক্তা মূলত মধ্যবিত্তরাই। অতিদরিদ্রদের কাছে ১০ টাকা দরে যে সামন্য কিছু চাল বিক্রি হতো, তার দাম ১৫ টাকা করা হয়েছে। সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সয়াবিন তেল এখন সরকারই নির্ধারণ করে দিলো ২০৫ টাকা। ৩৫ দিনের মাথায় এ নিয়ে দুই দফা সয়াবিন তেলের দাম বাড়লো। সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি খাতে বরাদ্ধ যথেষ্ট নয়।’

তিনি বলেন, ‘বলা হচ্ছে, দুই বছরে করোনার পরিপ্রেক্ষিতে লক্ষ হাজার টাকার ওপরে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল। আমাদের প্রশ্ন—সে টাকা গেল কই? তার মধ্যে একটা টাকাও কি পরিশোধ হয়েছে, জনগণ জানতে চায়। শুনি রপ্তানি নাকি হু হু করে বাড়ছে। তাহলে প্রণোদনার টাকা পরিশোধ হচ্ছে না কেন? কারা কারা প্রণোদনা পেয়েছে এবং এই পর্যন্ত কি পরিমান টাকা পরিশোধ করেছে, তার ওপরে সরকারের শ্বেতপত্র চায় জনগণ।’

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ গতানুগতিক। করোনাকালে এই খাতে যেসব দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে, সেগুলো পূরণের জন্য কোনো ধরনের পদক্ষেপ বাজেটে নেই। করোনাকালে সরকারের মন্ত্রীরা যেসব প্রতিশ্রুতির কথা শুনিয়েছিলেন, বাজেটে তার প্রতিফলন হয়নি। আমরা মনে করি, বাজেটে স্বাস্থ্য সেক্টারকে চরমভাবে অবহেলা করা হয়েছে।’

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এই মুহূর্তে বাংলাদেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি কাজ করছে না। এখন কাজ করছে আওয়ামী ইকোনমিক মডেল। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকাগুলো নিচ্ছে সবকিছুর দাম বাড়িয়ে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান, নাসের রহমান এবং চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।