পদ্মা সেতু পারাপারে খুলনা-ঢাকা রুটের ‘এসি’ বাসের ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। পরিবহনগুলো ইচ্ছামত ভাড়া নিচ্ছে। এসি ভাড়ায় নেই সমন্বয়। নন-এসি’র ক্ষেত্রে সরকার ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও এসি’র ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এ নৈরাজ্য তৈরি হয়েছে। ফলে খুলনাঞ্চলের যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস-কোচ মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সোনা। তিনি বলেন, খুলনা-ঢাকা রুটে চলাচলকারী নন-এসি বাসের ভাড়া সবাই মোটামুটি বিআরটিসির ভাড়ার কাছাকাছি রেখেছে। তবে এসি বাসের ভাড়া সরকার নির্ধারণ করে দেয় না, এটা বাস মালিকরা নির্ধারণ করেন। তারপরও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে বাস মালিকদের বলা হয়েছে।
ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে মাওয়া হয়ে খুলনার দূরত্ব ২০৭ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচলকারী দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যের ১২ রুটের যাত্রীবাহী বাসসহ যানবাহনগুলোর ভাড়া ৫৩৭ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তবে পরিবহন কর্তৃপক্ষ নন-এসি বাসে ভাড়া নির্ধারণ করেছে ৬০০ টাকা। আর এসি বাসের ভাড়া নিচ্ছে ইচ্ছামাফিক ৭০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে।
বিআরটিএ’র সূত্রে জানা গেছে, বিআরটিএ কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে ৪০ সিটের বাসে (নন-এসি) ঢাকা-খুলনা রুটের ভাড়া ৫৩৭ টাকায় নির্ধারণ করা হয়। পরিবহনের মানভেদে এ ভাড়ারও তারতম্য রয়েছে। তবে সেটি খুব বেশি প্রভাব ফেলছে না। কিন্তু এ রুটে চলাচলকারী এসি বাসের ভাড়া তুলনামূলক অনেক বেশি নির্ধারণ করেছে পরিবহন মালিকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রবি এক্সপ্রেস (সেন্টমার্টিন হুন্দাই) পরিবহনের ২৮ সিটের বাসের ভাড়া ১১০০ টাকার স্থলে ১২০০ টাকা, গ্রীনলাইন পরিবহনের বিজনেস ক্লাস ও ডবল ডেকার বাসের ভাড়াও ১০০০ টাকার স্থলে ১২০০ টাকা, ফাল্গুনী পরিবহনের ৩০/৩১ সিটের এসি বাসের ভাড়া ৯৫০ টাকা করা হয়েছে। টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের বিজনেস ক্লাস এসি বাসের (৩১ সিট) ভাড়া ৯০০ টাকা করা হয়েছে। তবে বিআরটিএর ঘোষণা সত্ত্বেও ইমাদ, ফাল্গুনী বা টুঙ্গিপাড়া পরিবহন কর্তৃপক্ষ নন-এসি ৪০ সিটের বাস ভাড়া কমিয়ে ৬০০ টাকার পরিবর্তে ৫৩৭ টাকা বা কাছাকাছি নির্ধারণ করেনি। এমনকি ইকোনমি ক্লাসের এসি বাসের ভাড়া (৪০+ সিট) ৭০০/৭৫০ টাকা থেকেও কম করেনি।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খুলনা-ঢাকা রুটে যাতায়াতকারী বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মো. নুরুল ইমাম খান মিঠু। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, দুরত্ব ৮০ কিলোমিটার এবং ডেডিকেটেড লঞ্চের ঝামেলা কমে গেলেও রবি এক্সপ্রেস ও গ্রীণলাইনের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি ঠিক মেনে নেওয়া যায় না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মামুন রহমান তার ফেসবুক পোস্টে মন্তব্য করেন, ‘আমার মনে হয়, আসন্ন ঈদ মৌসুমে এটা মানুষ একপ্রকার সহ্য করলেও রাস্তার ভালো অবস্থা এবং টুঙ্গিপাড়া ও ফাল্গুনী পরিবহনের গাড়ির মান বিবেচনায় রবি এক্সপ্রেস ও গ্রীনলাইনের এই স্বেচ্ছাচারিতা মানুষ বেশিদিন মেনে নেবে না।’
ঢাকা-খুলনা রুটে পরিবহনের সংখ্যা বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। খুলনার রয়েল মোড়ে রয়েছে ঢাকাগামী গণপরিবহনের ২০টির বেশি কাউন্টার। ধারাবাহিকভাবে বাসগুলো ছেড়ে যাচ্ছে রাজধানীর উদ্দেশে।
ইমাদ পরিবহনের রয়েল মোড় কাউন্টারের ম্যানেজার শরীফ আল মামুন বলেন, প্রতিদিন খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ২৩টি বাস ছেড়ে যায়। কিন্তু পদ্মা সেতু চালুর পর পরীক্ষামূলকভাবে আরও ২টি বাস বাড়ানো হয়েছে। যাত্রী বাড়লে বাসের সংখ্যাও বাড়বে। তারা ঢাকা-খুলনা রুটে যাত্রীপ্রতি ভাড়া এসিতে ৭০০ টাকা ও নন-এসিতে ৬০০ টাকা নিচ্ছেন।
সোহাগ পরিবহনের রয়্যাল মোড় কাউন্টারের সহকারী ম্যানেজার মো. বুলবুল বলেন, ঢাকা-খুলনা রুটে আগে তাদের দুটি বাস চলাচল করতো। এখন ১৫টি বাস বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে এসি বাস ৫টি ও নন-এসি রয়েছে ১০টি। এ রুটে সিটপ্রতি ভাড়া এসি বাসে ১২০০ টাকা ও নন-এসি বাসে ৬০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
খুলনা থেকে রাজধানী ঢাকাতে প্রতিদিন যাতায়াত করে কয়েক হাজার মানুষ। মাওয়া ঘাটের সেই চিরচেনা ফেরি পারাপারের ভোগান্তি ছাড়াই ঢাকা পৌঁছাচ্ছেন খুলনাঞ্চলের মানুষ। কারণ স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হয়েছে। শনিবার (২৫ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর উদ্বোধনের পর রোববার (২৬ জুন) সকাল ৬টা থেকে সব ধরনের যান চলাচল শুরু হয় বহুল প্রতীক্ষিত এ স্থাপনার ওপর দিয়ে।