মায়ের গর্ভে গুলিবিদ্ধ সেই সুরাইয়ার বয়স এখন সাত বছর। সে পড়ালেখা করছে মাগুরা শহরের পুলিশ লাইনস প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
মাগুরা শহরের দোয়ারপাড়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলি লাগে অন্তঃসত্ত্বা নাজমা বেগমের পেটে। এতে গর্ভে থাকা শিশু গুলিবিদ্ধ হয়। ওই দিন রাতেই জেলা সদর হাসপাতালের ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারে জন্ম নেয় শিশুটি। তার নাম দেওয়া হয় সুরাইয়া। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যালেও চিকিৎসা দেওয়া হয়।
২০১৫ সালের ২৩ জুলাইয়ে জন্ম নেওয়া সুরাইয়ার বয়স এখন সাত বছর।
সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হওয়ার কারণে সুরাইয়ার ডান চোখে দৃষ্টিশক্তি নেই। দুই পায়ে শক্তি নেই। অন্য শিশুরা হেঁটে স্কুলে গেলেও সুরাইয়া মায়ের কোলে চড়ে স্কুলে যায়। মা নাজমা বেগম কাজের ব্যস্ততায় সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন স্কুলে নিতে পারেন তাকে।
সাত বছর আগের ওই সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হন সুরাইয়ার চাচা মোমিন ভূঁইয়া। মাতৃগর্ভে শিশুর গুলিবিদ্ধ হওয়া এবং ওই হত্যার ঘটনায় সদর থানায় মামলা হয়। মামলাটি এখন সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে আছে। মাগুরা অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে মামলাটির বিচারকাজ চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাগুরা জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এস্কেন্দার আজম বলেন, মামলায় ১৭ জন আসামির বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে চার্জ গঠন হয়। প্রায় তিন বছর ওই আদালতে বিচারক ছিলেন না। পাশাপাশি করোনার কারণেও মামলা ধীরগতিতে এগিয়েছে। আদালত খুব শিগগিরই রায় দেবেন বলে আশা করছি।
এক বছর আগে সুরাইয়াকে গণশিক্ষা কার্যক্রমের একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়েছিল। তবে করোনার কারণে সেটা নিয়মিত হয়নি। এবার মাগুরা শহরের পুলিশ লাইনস প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে সুরাইয়াকে ভর্তি করা হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকসানা আক্তার বলেন, ‘শিশুটির দুটি পা, একটি হাত ও একটি চোখ অকার্যকর। মায়ের কোলে চড়ে স্কুলে আসে সে। নিয়মিত স্কুলে আসে না।
নাজমা বেগম বলেন, আমার বাচ্চা যদি স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিত, আজ তাহলে ও নিজেই হেঁটে স্কুলে যেত। অন্য শিশুদের মতো খেলাধুলা করত। কিন্তু এখন কারও সাহায্য ছাড়া সে কিছু করতে পারে না। কোমর থেকে পা পর্যন্ত বল নেই। ডান হাত কাজ করে না। ডান চোখও দৃষ্টিহীন। তবে যত কষ্টই হোক, ওকে পড়ালেখা শিখিয়ে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
সুরাইয়ার বাবা চা বিক্রেতা বাচ্চু ভুঁইয়া বলেন, বিচারের জন্য আদালতে দৌড়াই আবার পেটের দায়ে স্বামী-স্ত্রী দুই জনের কাজ করতে হয়। দারিদ্র আর গুলিবিদ্ধ অসুস্থ মা-মেয়েকে নিয়ে নিদারুণ কষ্টে কাটে তাদের দিন।
এতদিন সুরাইয়ার বাড়িতেই সময় কেটেছে। কিন্তু এখন স্কুলে যেতে হলে একজন সঙ্গে থাকতে হয়। কারণ, সে একা বেঞ্চে বসে থাকতে পারবে না। এ কারণে একটি হুইল চেয়ার ও ওয়াকার লাগবে। তাহলে ওর স্কুলে যাওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না।