বেতন বৃদ্ধির দাবিতে চা-শ্রমিকদের কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। কর্মবিরতির সঙ্গে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন বাগানে বিক্ষোভ চলছে। অনিশ্চয়তায় পড়েছে এই শিল্প।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সিলেটের বিভিন্ন বাগানে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। শ্রম অধিদপ্তরের মধ্যস্থতায় বাগান মালিক পক্ষ ও চা শ্রমিক নেতাদের দুই দফা সমঝোতা বৈঠক হলেও এখনো ফলাফল আসেনি।
বুধবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে চা বাগান মালিক ও চা শ্রমিকদের নিয়ে ঢাকায় দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে বসে শ্রম অধিদপ্তর। দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা আলোচনা শেষে রাত ১১টার দিকে শেষ হয় এই বৈঠক। পুরো বৈঠকে নিজেদের ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে অনড় ছিলেন চা শ্রমিক নেতারা। শ্রমিকরা এখন দৈনিক ১২০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন।
বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পঙ্কজ কন্দ জানান, বৈঠকে বাগান মালিকরা আবারও আন্দোলন স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু তা মেনে নেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বৈঠকে চা শ্রমিকদের একটাই মূল দাবি ছিল— দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরি। এর পরিপ্রেক্ষিতে মালিকপক্ষ যা দিতে চেয়েছে তা বলার মতো না। তাই বাধ্য হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালী সভাপতি রাজু গোয়ালা জানান, ‘আমাদের দাবি মেনে নেয়নি বাগান মালিকপক্ষ। এ অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ছাড়া পথ খোলা নেই। তবে আন্দোলন চলবে, পাশাপাশি সরকার চাইলে আলোচনাও চলবে।’
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলেও শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী সঙ্গে চা শ্রমিক নেতাদের বৈঠক হয়। যা দিনশেষে ব্যর্থতায় রূপ নেয়। তখন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শ্রমিক নেতারা।
চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বেলা ১১টায় লাক্কাতুরা চা বাগান এলাকায় এসে জড় হন শ্রমিকরা। সেখানে তারা অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি বিক্ষোভ মিছিল করেন।
শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন চা শ্রমিক নেতারা। বৈঠকের নামে সময়ক্ষেপণকে তারা প্রহসন বলেও উল্লেখ করেন।
টানা চারদিন ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন শেষে শনিবার (১৩ আগস্ট) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেন শ্রমিকরা। শোক দিবস উপলক্ষে রোববার (১৪ আগস্ট) ও সোমবার (১৫ আগস্ট) কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সকাল থেকে পুনরায় লাগাতার কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। কর্মবিরতি চলাকালে বাগানগুলোতে মিছিল সমাবেশ করেন চা শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ চা সংসদ নর্থ সিলেট ভ্যালির ভাইস চেয়ারম্যান নোমান হায়দার চৌধুরী বলেন, প্রতিদিন অন্তত ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এই শিল্প ধংসের ধারপ্রান্তে। তিনি বলেন, সংকট নিরসনের বিষয়ে সরকারের উচ্চমহল থেকে দেখা হচ্ছে।