বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর সাজানো মামলার আসামি সেই জজ মিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কষ্টের কথা বলতে চান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতে অনেকের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। কিন্তু, কেউ জজ মিয়ার কথা শুনছেন না। পরে মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেও কষ্ট থেকে মুক্তি মেলেনি তার।
রোববার (২১ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মাতুয়াইলে একটি হাসপাতালের পাশে বসে রাইজিংবিডির এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন জজ মিয়া।
কেমন আছেন? প্রশ্ন করামাত্রই জজ মিয়া বলেন, ‘আর কেমন থাকতে পারি, ভাই? বিএনপি সরকার আমাকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বর্তমান সরকারের ১৩ বছরে আমি স্থায়ী কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্নজনের কাছে গিয়েছি, কিন্তু কাজ হয়নি। আমার মা সন্তানের কষ্ট সইতে না পেরে মারা গেছেন। এখন আমার পরিবার আছে। তাদের আমি কী দিয়ে যামু? কষ্টের জীবনযাপন করতে করতে আর আমি পারছি না। নিরুপায় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য অনেক নেতার কাছে গেছি। কেউ আমাকে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেননি। আমি আদালতে গেছি ন্যায়বিচারের জন্য। আদালত এখন বিচার করবেন। তবে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারলে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতের কাছে যাইতে হইতো না।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মানুষের কষ্ট বোঝেন এবং কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করেন। তার সাক্ষাৎ কামনা করছি এ কারণে যে, আমার দুঃখ-কষ্ট তাকে জানাতে চাই।’
অপর প্রশ্নের জবাবে জজ মিয়া বলেন, ‘ন্যক্কারজনক ও জঘন্য এ ঘটনার (গ্রেনেড হামলা) সঙ্গে আমি কোনোভাবেই জড়িত ছিলাম না। তারপরও সাবেক বিএনপি-জামাত জোট সরকার আমাকে সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। জেলের প্রকোষ্ঠে আমার চারটি বছর কেটেছে। মামলার ঘানি টানতে গিয়ে সব সম্পদ বিক্রি করতে হয়েছে। আশা ছিল, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে হয়ত আমার দুঃখের কথা শুনে একটা ব্যবস্থা করে দেবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি যদি বিএনপির লোক হতাম, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কিভাবে আদালতে জবানবন্দি দিলাম? জবানবন্দিতে বেড়িয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা, যা জনগণের সামনে উন্মুক্ত হয়েছে। দায়ীদের বিচারের মুখোমুখিও করা গেছে। কিন্তু, আমি ক্ষতিগ্রস্তই রয়ে গেলাম। বিতর্কের জন্য ঠিকমতো কেউ কাজও দিচ্ছে না। এখন বিভিন্ন ফ্যাক্টরি থেকে পুরনো বা ফেলনা মাল কিনে তা আবার বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছি।’
জেলের বিভীষিকাময় দিনের স্মৃতিচারণ করে জজ মিয়া বলেন, ‘ফাঁসির আসামিকে জেলখানার কনডেম সেলে রাখা হয়, ডান্ডা বেড়ি পরানো হয়। আমার ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে। অথচ আমার বিরুদ্ধে কোনো দণ্ড ছিল না। আমাকে তিন বছর কনডম সেলের ভেতরে থাকতে হয়েছে। যা জেল কোডের পরিপন্থী। মা, ভাই, বোনসহ কোনো নিকট স্বজনের মুখ দেখতে দেয়নি। জেলখানায় যে ব্যক্তি খাবার দিতো, শুধু তার চেহারাটা দেখতাম। তাও আবার ঠিকমতো কথা বলা যেত না।’
উল্লেখ, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের সময় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও মারা যান ২৪ জন। আহত হন অসংখ্য মানুষ। তৎকালীন সরকার ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে নোয়াখালীর সেনবাগের জজ মিয়াকে গ্রেপ্তার দেখায়। তার নির্দেশ বা নেতৃত্বে ন্যক্কারজনক এ হামলা হয়েছে বলে প্রচার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জোর করে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও আদায় করে। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। পরে আদালত জজ মিয়াকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেন।