হবিগঞ্জে সাড়ে ৪ ঘন্টা পর চা শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ প্রত্যাহার হয়েছে। রোববার (২১ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টায় শ্রমিকরা অবরোধ প্রত্যাহার করে।
দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়া অবরোধের খবর পেয়ে জেলার মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি শ্রমিকদের বলেন, ‘২৩ আগস্ট ঢাকায় মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে আপনাদের দাবি নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হবে। আশা করি, ওই সভায় আপনাদের সমস্যা সমাধান হবে। এ আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে মহাসড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেন শ্রমিকরা।’
এ সময় জেলার চুনারুঘাট উপজেলার চান্দপুর চা বাগানের বাসিন্দা চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘২৩ আগস্ট মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে সভায় আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরা হবে। এর আগ পর্যন্ত নিজ নিজ বাগানে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা হবে। যদি ২৩ আগস্ট দাবি পূরণ না হয়, তবে পরবর্তী ব্যবস্থা সবাই মিলে পরামর্শ করে নেব।’
জগদীশপুরে অবরোধকালে মহাসড়কের উভয় পাশে শত শত যানবাহন আটকে পড়ে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অবরোধ শেষ হলে গাড়িগুলো গন্তব্যে যাত্রা করে। তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি খোকন তাঁতি বলেন, ‘চা শ্রমিকরা দীর্ঘদিন অবহেলিত। আমরা যে মজুরি পাই, তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের ছেলে-মেয়েদের উচ্চশিক্ষিত করার ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনমান কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই আমাদের দৈনিক মজুরি বৃদ্ধির দাবি ন্যায্য দাবি।’
লস্করপুর চা-ভ্যালির সভাপতি রবিন্দ্র গৌড় বলেন, সুরমা, তেলিয়াপাড়াসহ বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা নিজ নিজ চা বাগানে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। একপর্যায়ে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা নিজ নিজ উদ্যোগে জগদীশপুর পয়েন্টে এসে মহাসড়ক অবরোধ করে। বিকেল সাড়ে ৩টায় অবরোধ প্রত্যাহার হয়েছে।
৩০০ টাকা মজুরি আদায়ে ৯ থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত দৈনিক দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের ১০ জন শ্রমিক নেতার সঙ্গে শ্রীমঙ্গলে বিভাগীয় শ্রম দপ্তরে কর্মকর্তারা বৈঠকে বসলেও আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। তাই শনিবার (১৩ আগস্ট) থেকে টানা ধর্মঘটের ডাক দেয় শ্রমিকরা।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে শ্রীমঙ্গলে আসেন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী। তিনি ধর্মঘট স্থগিত করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানালে চা শ্রমিক ইউনিয়ন তা প্রত্যাখান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। একইভাবে বুধবার (১৭ আগস্ট) রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনে চা-বাগান মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীর বৈঠক হয়। সন্ধ্যায় ৬টার দিকে শুরু হওয়া বৈঠক শেষ হয় রাত ১১টায়। চা শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে প্রায় ৫ ঘণ্টার মতো ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পরও কোনো সমঝোতা হয়নি। বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিক নেতারা বৈঠক করে দাবি আদায়ে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। শনিবার (২০ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কার্যালয়ে বৈঠকের মাধ্যমে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকার ঘোষণা করা হয়।