চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই খবরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের বিভিন্ন ভ্যালী নেতারা। ফলে টানা ১৯ দিন কর্মবিরতি পালনের পর রোববার (২৮ আগস্ট) থেকে কাজে ফিরছেন। ভ্যালী নেতারা বলেছেন, রোববার (২৮ আগস্ট) অনেক বাগানে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন। এরজন্য কিছু বাগানের শ্রমিকরা হয়তো পরদিন সোমবার (২৯ আগস্ট) থেকে কাজে যোগ দেবেন।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী শনিবার (২৭ আগস্ট) বিকেল ৪টার পরপরই গণভবনে বৈঠক শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যা ৭টায়। ১৩ জন বাগান মালিক এ বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস এ বিষয়ে ব্রিফ করেন। তিনি জানান, সরকার প্রধান শেখ হাসিনা শ্রমিকদের আজ থেকে কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দেন।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা পাওয়ার পর বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে উৎসব বিরাজ করছে। চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভ্যালী সভাপতিরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। আবারও কোনো কোনো বাগানের শ্রমিকরা তাদের সিদ্ধান্ত রোববার (২৮ আগস্ট) সকালে জমায়েত হয়ে জানিয়ে দেবেন বলে জানান।
মালনীছড়া চা বাগানের শ্রমিক নমিতা বারিক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কথা বলে আমাদের ধোকা দেওয়া হচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করে দেননি, আজকের ঘোষণা এর প্রমাণ। আমাদের বিশ্বাস ছিল, প্রধানমন্ত্রী নিজে আমাদের মজুরি বাড়িয়ে দেবেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করছি। এবার পঞ্চায়েতের সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজে ফিরবো।’
চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালীর সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার দাবি উঠেছিল, এখন তিনি মজুরি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এরপর আর কোনো বক্তব্য নেই। শ্রমিকরা কাজে ফিরবেই।
সিলেট ভ্যালীরই চা বাগান মালনীছড়া। এই বাগানের শ্রমিকদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চা শ্রমিক ফেডারেশনের সংগঠক অজিত রায়। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রতিক্রিয়া এই মুহূর্তে আমরা জানাচ্ছি না। রোববার (২৮ আগস্ট) বেলা ১১টায় পুজামণ্ডপে সকল শ্রমিক জমায়েত হবে। এরপর আমরা কাজে ফিরবো, নাকি ফিরবো না তা সিদ্ধান্ত জানাবো।’
তবে সিলেট ভ্যালী সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেছেন, তারা ওই জমায়েতে যাবেন না।
চা শ্রমিক ইউনিয়ন হবিগঞ্জের লস্করপুর ভ্যালীর সভাপতি রবীন্দ্র গৌর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের ভালোর জন্যই ১৭০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমরা তার সিদ্ধান্তে কাজে ফিরবো।’ তিনি বলেন, অনেক বাগানের সাপ্তাহিক ছুটি রয়েছে। এরজন্য পরদিন থেকে বাগান পুরোদমে সচল হবে।
বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এন শাহ আলম বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বললাম। তিনি যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছেন, তার সবই আমরা মেনে নিয়েছি। আমি সব শ্রমিকের আহ্বান জানাই, তারা যেন আগামীকাল থেকে কাজে যোগ দেন।’
দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নামেন দেশের ১৬৬টি চা বাগানের দেড় লাখের বেশি শ্রমিক। সেদিন থেকে চার দিন পর্যন্ত দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন তারা। এরপর ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে যাওয়ার পর দফায় দফায় সমাধানের চেষ্টা করলেও শ্রমিকরা বেকে বসে। তারা সমাধানে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চায়। ১৯ আগস্ট রাতে মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার বিষয়ে একটি চুক্তিও হয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যায় শ্রমিকরা। শনিবার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার মধ্য দিয়ে নিরসন হচ্ছে চা—শ্রমিকদের আন্দোলন সংকটের।