মা ও চার বোনসহ ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আসেন রোহিঙ্গা নারী হুমায়রা। ২০২০ সালে সৌদি প্রবাসী একজনকে বিয়ে করে বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকেন তিনি। পরে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের চর চান্দহর গ্রামের খলিলুর রহমানের মেয়ে তাসনিমা বেগম পরিচয়ে এবং স্থানীয় চেয়ারম্যান মো.শওকত হোসেন বাদলের পরিচয়পত্র নিয়ে পাসপোর্ট করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন তিনি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ফিঙ্গার দিতে গিয়ে হুমায়রা ওরফে তাসনিম বেগমের ফিঙ্গার রোহিঙ্গা ডাটাবেজে মিলে যায়। রোহিঙ্গা হিসেবে শনাক্ত হওয়ায় হুমায়রাকে পুলিশে সোপর্দ করে পাসপোর্ট অফিস।
এদিকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় আবু তাহের নামের আরেক রোহিঙ্গা যুবককেও (২৭) আটক করা হয়েছে।
রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট সহকারী পরিচালক নাহিদ নেওয়াজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আটক রোহিঙ্গা নারী হুমায়রা ও আবু তাহের সাংবাদিকদের জানান, এক লাখ টাকার চুক্তিতে তারা পাসপোর্ট করতে আসেন। ইতোমধ্যে দালালকে ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন।
আটক রোহিঙ্গা আবু তাহের ২০০৮ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে চকরিয়াতে স্থায়ীভাবে থাকেন। তিনি স্থানীয় একটি হোটেলের কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন।
মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক নাহিদ নেওয়াজ বলেন, ‘রোববার দুপুরের দিকে তাসমিন বেগম নামের যে নারী পাসপোর্ট করতে এসে ধরা পরেছেন তার প্রকৃত নাম হুমায়রা। তিনি উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের থাকেন। তার রোহিঙ্গা আইডি ১৫৫২০১৭১২২৪১১৫৪৫৯। তিনি মা চার বোনসহ ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আসেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘জেলার সিংগাইরের চান্দহর ইউনিয়নের চর চান্দহর গ্রামের খলিলুর রহমানের মেয়ে তাসনিমা বেগম পরিচয়ে এবং স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. শওকত হোসেন বাদলের পরিচয়পত্র নিয়ে পাসপোর্ট করতে আসেন হুমায়রা। যাচাই বাছাই ও ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়ার সময় রোহিঙ্গা ডাটাবেজের সঙ্গে মিলে যায় হুমায়রার ফিঙ্গার প্রিন্ট। পরে তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ওই নারী সিরাগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতানি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্মসনদ গ্রহণ করেন।’
চান্দহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো.শওকত হোসেন বাদলের সঙ্গে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমার সই জাল করে একটি চক্র এই অপকর্মটি করেছে। এ ব্যাপারে আমি সিংগাইর থানায় সাধারণ ডাইরি করবো।’
পাসপোর্ট অফিসে আটক হুমায়রা সাংবাদিকদের জানান, তিনিসহ ওই যুবক আজ রোববার সকালে কক্সবাজার থেকে মানিকগঞ্জে আসেন। তার সঙ্গে স্থানীয় দালালও ছিলেন। তাকে নিয়ে পাসপার্টের যাবতীয় কাগজপত্র জমা দেন।
তিনি আরও জানান, ২০২০ সালে মোবাইল ফোনে তোফায়েল হোসেন (৫০) নামে সৌদি প্রবাসীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তিনি সৌদি যাওয়ার জন্য মানিকগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করার জন্য এসেছিলেন।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিস থেকে এক রোহিঙ্গা নারী ও যুবককে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’