বুড়িগঙ্গার তীরে অবৈধ ডকইয়ার্ডের ছড়াছড়ি। নদীগর্ভ দখল করে গড়া ওঠা ওই ডকইয়ার্ডগুলোর কারণে পরিবেশের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি বুড়িগঙ্গার জীবপ্রকৃতিও নষ্ট হচ্ছে।
পড়ুন: শিল্পবর্জ্যে শীতলক্ষ্যার সর্বনাশ
নৌ-মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ২০১৯ সালে বুড়িগঙ্গা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী নদীগুলোতে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তখন নদী-তীরবর্তী অনেক বড় স্থাপনাও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ৩২টি ডকইয়ার্ড ভাঙা হয়নি। বর্তমানে কেরানীগঞ্জের মাদারীপুর ডকের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও লাইসেন্সহীন আরও ৩১টি ডকইয়ার্ড সচল রয়েছে। প্রতিটি ডকেই নতুন জাহাজ ও লঞ্চ নির্মাণ কর্মযজ্ঞ চলছে। পাশাপাশি নদীতে নোঙর করে পুরনো জাহাজ মেরামতের কাজও চলছে।
বিভিন্ন ইয়ার্ড থেকে জাহাজ তৈরি ও ভাঙার বিভিন্ন অংশও নদীতে ফেলা হচ্ছে। কারখানাগুলোতে কাজ করছে তাদের নেই সুরক্ষা সরঞ্জাম। মেরামতের সময় পুরনো জাহাজে থাকা ডিজেল, লুব্রিক্যান্টসহ তলদেশে থাকা বিভিন্ন বর্জ্য বুড়িগঙ্গার পানিতে মিশে যাচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাণ হারায় অর্ধশতাধিক মানুষ। ওই দুর্ঘটনার কারণ জানতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য লঞ্চের ইঞ্জিনের ত্রুটিকে দায়ী করা হয়। ইঞ্জিনটি ঢাকা কেরানীগঞ্জের মীরেরবাগের মাদারীপুর ডক থেকে সংযোজন করা হয়েছিল। তদন্তে উঠে আসা ওই ডকটি বন্ধ করে দিলেও আরও ৩১টি অবৈধ ডক সচল রয়েছে।
১৯৬০ সাল থেকে রাজধানীর কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গার তীরে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে এসব ডকইয়ার্ড। পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি এসব ডকইয়ার্ডের কারণে দেশের প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটের নৌপথ সংকুচিত হয়েছে।
২২ সেপ্টেম্বর ঘুরে দেখা যায়, কেরানীগঞ্জের মীরেরবাগে মাদারীপুর ডকের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও লাইসেন্সহীন আরও ৩১টি ডকইয়ার্ড সচল রয়েছে। প্রতিটি ডকেই চলছে নতুন জাহাজ ও লঞ্চ নির্মাণকাজ। পাশাপাশি নদীতে নোঙর করে চলছে পুরনো জাহাজ মেরামতের কাজও। বিভিন্ন ইয়ার্ড থেকে জাহাজ তৈরি ও ভাঙার বিভিন্ন অংশও নদীতেই ফেলা হচ্ছে। কারখানাগুলোতে কাজ করছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ, তাদের কারো সুরক্ষা সরঞ্জাম নেই। এছাড়া পুরনো জাহাজে থাকা ডিজেল, লুব্রিক্যান্টসহ তলদেশে থাকা বিভিন্ন বর্জ্য বুড়িগঙ্গার পানিতে মিশে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে একাধিক ডক মালিক জানান, ডকইয়ার্ডের লাইসেন্স নবায়নের জন্য কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জটিলতায় লাইসেন্স পেতে দেরি হচ্ছে।
মাদারীপুর ডকের মালিক মো. সহিদুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, কোনো ডকেরই লাইসেন্স নেই। শুধু আমার ডকটিই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা ডকইয়ার্ডের মালিক মো. ইকবাল হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন,কেরানীগঞ্জ থেকে ডক সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কথা হচ্ছে। বেশকিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই আমরা এখান থেকে সরে যাব।
বিআইডব্লিউটিএর একজন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, ২৯১৯ সচলে আমরা অঙ্গীকার নিয়েই মাঠে নেমেছিলাম। সফলও হয়েছি অনেক। কিন্তু এ ডকইয়ার্ডগুলো উচ্ছেদ করতে পারিনি।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, সম্প্রতি ডক মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তারাও নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখান থেকে ব্যবসা অন্য কোথাও সরিয়ে নিবেন। ডক মালিকদের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ রয়েছে। হুট করেই তো তাদের ফেলে দেওয়া বা সরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। ডকইয়ার্ডগুলো সরানোর জন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুচ্ছি আমরা।
তিনি বলেন, কেবল বুড়িগঙ্গাই নয়, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে দখলমুক্ত না করা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। সরকারের চেয়ে প্রভাবশালী কেউ নেই। তাই প্রভাব দেখিয়ে কাজ হবে না।
পড়ুন: বিশ্ব নদী দিবস আজ