ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী মো. শাহরিয়ারের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শাহরিয়ারকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সঠিক চিকিৎসা মেলেনি। সহপাঠীরা শাহরিয়ারকে আইসিইউতে নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আইসিইউ বেড দেওয়া হয়নি। উল্টো বাগবিতণ্ডার জেরে রামেকের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রাবি শিক্ষার্থীদের মারধর করেন। এতে অন্তত ছয় থেকে সাত শিক্ষার্থী আহত হন।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে শহীদ হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে যান শাহরিয়ার। পরে তাকে রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়। শাহরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজেলায়। তিনি হবিবুর রহমান হলের ৩৫৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে ভাঙচুর করেন। কয়েকশো শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে রাত সাড়ে ১১টায় হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও কর্মবিরতি শুরু করেন।
আরও পড়ুন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের বারান্দা থেকে পড়ে ছাত্রের মৃত্যু
এদিকে, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের কারণে পুরো হাসপাতালে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। রোগী ও স্বজনদের মধ্যে দেখা দেয় আতঙ্ক। পরিস্থিতি সামলাতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব হাসপাতালে অবস্থান করে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রাত সাড়ে ১২টায় হাসপাতাল সভাকক্ষে আলোচনায় বসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সভায় রাজশাহী নগর পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক, রাবি প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ অন্যান্য চিকিৎসক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় একটি কমিটি গঠন করে ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলীকে। এছাড়া, রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক, নগর পুলিশের দুজন প্রতিনিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মনোনীত দুজন শিক্ষক এই কমিটির সদস্য থাকবেন। তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন পেশ করবে।
পরে রাত দেড়টায় এই সভা শেষ হয়। এরপর নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক, রাবির বিজনেস ফ্যাকাল্টির ডিন ড. ফরিদ হাসান এবং মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক শুভ্রা রানী গিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে বক্তব্য দেন।
তদন্ত কমিটি করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এমন আশ্বাস দিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তাদের বক্তব্য শেষে রাত ২টায় শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয়। হাসপাতালে ফিরে আসেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
মৃত্যুর পর নিহত শাহরিয়ারের মরদেহ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। নগর পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক জানিয়েছেন, ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবার মরদেহ নিতে চেয়েছে। সে অনুযায়ী আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।