রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, ‘‘রাবিতে আমার বিরুদ্ধে যে কথা বলা হচ্ছে তা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি, জঙ্গি ও খুনিদের ষড়যন্ত্রের ফসল। এটা কোনো দিন বাস্তবায়ন হবে না। আমরা ক্যাম্পাসে যাবো, সভা করবো। এটার জন্য তারা যেন অপেক্ষা করে।’
রোববার (২৩ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজশাহী নগরীর হড়গ্রামে নিজের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি রাবি শিক্ষার্থী শাহরিয়ারের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। এটা একটা হত্যাকাণ্ড বলেও দাবি করেন।
গত বুধবার রামেক হাসপাতালে রাবি শিক্ষার্থী শাহরিয়ারের মৃত্যুর পর হাসপাতালে ভাঙচুর চালান তার সহপাঠীরা। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে তাদের মারামারিও হয়। এ নিয়ে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রাবি কর্তৃপক্ষ পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে।
এর আগে গত শনিবার ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মানববন্ধনে অংশ নেন রামেক হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা। এ সময় তিনি রামেক শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছেন বলে দাবি করেন।
সংসদ সদস্য ফজলে হোসেনের ওই বক্তব্যে ক্ষুদ্ধ হন রাবি শিক্ষার্থীরা। রোববার শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে রাকসুর সাবেক ভিপি ফজলে হোসেন বাদশাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন এবং তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।
সংবাদ সম্মেলন করে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘কালকে আমার দাবিটা ছিল মূলত একটা জায়গায়। মূল দাবি ছিল, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ধর্মঘট করো, কিন্তু জরুরি স্বাস্থ্যসেবা চিকিৎসা চালিয়ে যাও। আরেকটা দাবি আমার ছিল, যেটা ভিসিকেও বলেছি। আরএমপি কমিশনারকে বলেছি যে এত বড় একটা ঘটনা, একটা ছাত্র কীভাবে মৃত্যুবরণ করল এটা পোস্টমর্টেম ছাড়া আপনারা কীভাবে ছেড়ে দেন। এটাই হলো বড় প্রশ্ন। এখনও আমি পোস্টমর্টেমের দাবি ত্যাগ করিনি। ১০ দিন পরে হলেও করতে হবে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে হবে। এই দাবি করার জন্য আমাকে অবাঞ্ছিত করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি রাকসুর ভিপি ছিলাম। বিএনপি-জামাতের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজকে রক্ষা করেছিলাম। এ কারণে সবকিছু বাদ দিয়ে রাকসু ভবনে আমার নামটা মুছে দিয়েছে। আমার নাম কি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুছে দেওয়া সম্ভব? কেউ ইতিহাস লিখলে আমার নামটা লিখতে হবে।’
সংসদ সদস্য বলেন, ‘গত ১০ বছরে রাবির চার শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে। অসংখ্য ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হত্যাযজ্ঞ চলছে। তার ধারাবাহিকতায় এই ছেলেটা হত্যা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি হত্যার রাজনীতি শুরু করেছে। এই সময়ে একটা ডেডবডি পোস্টমর্টেম ছাড়া ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। আমরা তথাকথিত একটা আন্দোলনের ফাঁদে পড়ে গেছি। আমি পোস্টমর্টেম করাতে চাই। এই হত্যার সঙ্গে কারা জড়িত তা উৎঘাটন হোক। গতকাল আমি সারাদিন ক্যাম্পাসে ছিলাম। বহু কর্মচারীকে জিজ্ঞেস করেছি, কেউ বিশ্বাস করেনি যে এটা আত্মহত্যা বা পড়ে গিয়ে মৃত্যু। তারা বলেছেন হত্যা।’
ফজলে হোসেন বাদশা যে জিনিসটিকে মগজ বলছেন সেটা ছিল একটা পলিথিন সংবাদিকদের এমন কথা জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কেন বলতে যাব। ডাক্তাররা যা বলেছে সেটা বলেছি। শাহরিয়ারকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে পালস পাওয়া যায়নি। আমার বক্তব্য এটাই পোস্টমর্টেম ছাড়া ডেডবডি ছেড়ে দেওয়া হলো কেন, এটাই হলো মূল প্রশ্ন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যত হত্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে, এটা তারই ধারাবাহিকতা। নির্বাচনের আগে এই হত্যা এখান থেকেই শুরু হয়েছে। হত্যা যারা করেছে, তারা নিজেরা আত্মরক্ষার জন্য মগজের গল্প এনেছে। আমি জানতে চাই এটি হত্যা, অ্যাকসিডেন্ট, নাকি আত্মহত্যা। আমি সন্দেহ করি এটা হত্যা।’
গত বুধবার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় ব্লকের ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার। ওই রাতে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে রাবি শিক্ষার্থীদের মারামারি ও ভাঙচুরের কারণে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। শনিবার দুপুর থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রাবি শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে কর্মবিরতিতে ছিলেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপে রোববার বেলা ৩টার দিকে তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছেন।