রাজধানীর মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) শুরু হয়েছে হকি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ছয় দলের অংশগ্রহণে দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো হচ্ছে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক হকি লিগ। এর মধ্য দিয়ে ইতিহাসে নাম লেখালো বাংলাদেশের হকি। প্রবেশ করলো ফ্র্যাঞ্চাইজি যুগে।
আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হয় সাইফ পাওয়ার খুলনা ও একমি চট্টগ্রাম। এই ম্যাচে খুলনাকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে চট্টগ্রাম। জয়ী দলের পক্ষে জোড়া গোল করেন দলটির ভারতীয় খেলোয়াড় আইকন দেবিন্দর বাল্মিকি। চট্টগ্রামের হয়ে অপর গোলটি করেন আরেক বিদেশি ফ্লোরিয়ান এলভিস স্পারলিং। সাইফ পাওয়ার গ্রুপ খুলনার হয়ে গোল দুটি করেন পিসি স্পেশালিস্ট অধিনায়ক খোরশেদুর রহমান এবং তানজীম আহমেদ।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে এগিয়ে চলে সাইফ পাওয়ার গ্রুপ খুলনা এবং একমি চট্টগ্রামের ম্যাচ। প্রথম কোয়ার্টারের ১২ মিনিটে ম্যাচের প্রথম পিসি পায় একমি। কাজে লাগাতে পারেনি তারা। আশরাফুল আলমের পুশ স্টপ করেন রেজাউল করিম বাবু; সেখানে থেকে পোস্টে হিট নেন ভারতের দেবিন্দর বাল্মিকি। গোল করতে পারেননি। পরের মিনিটে আবারো পিসি পায় একমি। এবারও ব্যর্থ দলের খেলোয়াড়রা। প্রথম কোয়ার্টারে সাইফ কোনো পিসি পায়নি।
দ্বিতীয় কোয়ার্টারের ৯ম মিনিটে পিসি পায় সাইফ। দলটির জার্মান খেলোয়াড় মরিস ফ্রেইয়ের দুর্বল শটে গোল তুলে নিতে ব্যর্থ হয়। পরের মিনিটে একমির আশরাফুল আলমকে বক্সে অবৈধভাবে ফেলে দেন সাইফের গোলরক্ষক বিপ্লব কুজুর। পেনাল্টি স্ট্রোকের বাঁশি দেন রেফারি। তবে পেনাল্টি স্ট্রোক পেয়েও গোল করতে পারেননি একমির দেবিন্দর। আফসোসে বেশিক্ষণ পুড়তে হয়নি। মিনিট না পেরুতেই পিসি পায় একমি। এবার পিসি থেকে গোল করে একমির শুরুর অগ্রগামিতা এনে দেন দেবিন্দর। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় একমি চট্টগ্রাম।
পিছিয়ে পড়ে গোল পরিশোধে মরিয়া হয়ে উঠে সাইফ পাওয়ার গ্রুপ খুলনার খেলোয়াড়রা। তৃতীয় কোয়ার্টারের চতুর্থ মিনিট অর্থাৎ ৩৪ মিনিটে পিসি তুলে নেয় সাইফ। তপুর পুশ গুইদোর স্টপ থেকে হিট নেন খোরশেদ। কিন্তু একমির গোলরক্ষক সজিবুর রহমান দারুণ দক্ষতায় খোরশেদের হিট ঠেকিয়ে দেন। তবে শেষরক্ষা হয়নি। গোলরক্ষকের ঠেকানো বল জটলা থেকে পেয়ে একমির জালে পুরে দেন সাইফের তানজীম। সমতায় ফেরে সাইফ (১-১)। গোলের আনন্দ ফিকে হয়ে যায় ম্যাচের ৩৮ মিনিটে। দেবিন্দরের গোলে আবারো লিড একমির। পিসি থেকে গোল করেন তিনি। স্পারলিংয়ে পুশ রেজাউল করিম বাবুর স্টপ থেকে সরাসরি পোস্ট বরাবর হিট নেন একমির দেবিন্দর। ২-১ গোলে এগিয়ে যায় একমি।
পূর্বের তিন কোয়ার্টারের লড়াই অব্যাহত থাকে ম্যাচের চতুর্থ এবং শেষ কোয়ার্টারেও। এই অর্ধে আরো দুই গোল হয়। ৫৩ মিনিটে গোল করে দলের অগ্রগামিতা আরো বাড়িয়ে দেন একমির বিদেশি রিক্রুপ স্পারলিং। ফিল্ড গোলে ব্যবধান ৩-১ হয় একমির। ম্যাচের ৫৯ মিনিটে ব্যবধান কমান সাইফের খোরশেদ। পিসি থেকে গোল করেন তিনি (৩-২)। ম্যাচের বাকি সময় আর কোনো গোল না হওয়ায় প্রথম ম্যাচে হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে সাইফ পাওয়ার গ্রুপ খুলনা। খেলায় ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয় একমির বিদেশি খেলোয়াড় মালয়েশিয়ান হাফিজ জয়নুল।
সাইফ পাওয়ার খুলনা ও একমি চট্টগ্রামের ম্যাচে আগে হয় জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
এদিকে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে মোনার্ক পদ্মাকে ৩-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে রুপায়ন সিটি কুমিল্লা।
রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে প্রতিটি দল একে অন্যের সঙ্গে দুইবার করে মুখোমুখি হবে। প্রথম পর্বের খেলা শেষ হবে ১২ নভেম্বর। ৩০ অক্টোবর ও ১১ নভেম্বর দুই দিন বিরতি। প্রতিদিন হবে দুটি করে ম্যাচ। ১২ নভেম্বর প্রথম পর্বের শেষ দিনে হবে তিনটি ম্যাচ। শীর্ষ চার দল যাবে পরের রাউন্ডে। শীর্ষে থাকা দুই দল মুখোমুখি হবে কোয়ালিফায়ারে। জয়ী দল যাবে ফাইনালে। হেরে যাওয়া দল আরও একটি সুযোগ পাবে। তারা এলিমেনেটরে তৃতীয়-চতুর্থ দলের মধ্যকার লড়াইয়ে জয়ী দলের বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে লড়বে।
মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে প্রতিদিন খেলা হবে ফ্লাডলাইটের আলোতে। খেলাগুলো সরাসরি দেখা যাচ্ছে টি-স্পোর্টসে।