সিলেটের বিএনপি নেতা আ ফ ম কামাল খুনের ঘটনায় আজিজুর রহমান সম্রাট নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে খুঁজছে পুলিশ। একটি পূর্ব বিরোধের সূত্র ধরে সম্রাট এ খুনে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায় সম্রাটের নেতৃত্বে শাকিল, রাজু সহ ৫—৬ জন সন্ত্রাসী এ খুনের মিশনে অংশ নেয়। ঘটনার পরপরই তারা আম্বরখানার বড়বাজার গলির প্রধান সড়ক দিয়ে পালিয়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে পুলিশ এ তথ্য পায়।
সিলেট নগর পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ঘটনার সময় বিএনপি নেতা আফম কামাল ড্রাইভিং সিটে ছিলেন। এই অবস্থায় তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর আঘাত করা হয়। মাত্র দু’তিন মিনিটে ঘটনা ঘটিয়ে তারা চলে যায়।
সোমবার (৭ নভেম্বর) রাতে আ ফ ম কামালের লাশ তার গ্রামের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার আলীনগরের পালপুরে দাফন করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।
পুলিশের বিশেষ একটি সূত্র জানায়, আফম কামাল ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপি’র পরিচিত মুখ। তিনি জেলা বিএনপি’র সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক। গত কাউন্সিলে জেলা বিএনপির সম্মেলনে কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন। নগরীর আম্বরখানার মান্নান সুপার মার্কেটে তার এক আত্মীয়ের ট্রাভেলস রয়েছে। গত ১৯ অক্টোবর ওই ট্রাভেলস এ হাবিব নামের এক যুবককে সৌদি আরবে পাঠানোর পর কথা মতো কাজ দেওয়া হয়নি অভিযোগ করে আজিজুর রহমান সম্রাট ট্রাভেলস মালিক লাহিন ও ট্রাভেলস কর্মীদের মারধর করে। খবর পেয়ে আ ফ ম কামাল ও তার কয়েক সহযোগী নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে হামলার কারণ জানতে চেয়েছিলেন। একপর্যায়ে উভয়পক্ষ ঝামেলায় জড়ায়। আ ফ ম কামাল তখন সম্রাট ও তার সহযোগীদের চড় থাপ্পড় মেরেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় সম্রাট কোতোয়ালি থানায় একটি মামলাও দায়ের করেন। যার ৪ নং আসামি ছিলেন আ ফ ম কামাল। ঘটনার পর মামলার আসামি হয়ে যাওয়ায় অপর সহযোগী চমন, উমেদসহ সহযোগীরা আত্মগোপনে চলে যান। এরপর আ ফ ম কামাল হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার দুই দিন আগে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে আসেন। অন্যদিকে সম্রাট ও তার সহযোগীরা প্রতিশোধ নিতে মরিয়া ছিলো। তাই রোববার (৬ নভেম্বর) রাতের আ ফ ম কামালকে হত্যায় সম্রাটদের সন্দেহ করা হচ্ছে।
অপরদিকে আম্বরখানা এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সম্রাটের নেতৃত্বে আম্বরখানা পয়েন্ট সংলগ্ন এলাকায় ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ রয়েছে। ওই গ্রুপের টিম লিডার সম্রাট নিজেই। তারা আম্বরখানা এলাকার নানা বিষয়ে সম্প্রতি জড়িত হয়ে পড়ে। কারো সাথে কিছু ঘটলেই তাদের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে এসে ব্যবসায়ীদের সাথে বিরোধে জড়াতো সম্রাট। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে সম্রাট ছিলেন ছাত্রদলকর্মী। সরকার বদলের পরপরই সেও দল বদল করে ফেলে। এরপর রাজনৈতিক নেতাদের শেল্টার নিয়ে এখন আম্বরখানা এলাকার ত্রাসে পরিণত হয়েছে। শুধু আফম কামাল নয়, আর অনেকেরই সঙ্গে তার বিরোধ রয়েছে। এসব বিরোধের কারণে তাকে নিয়ে অস্বস্তিতে ছিলেন সবাই। এখন তার সঙ্গে এলাকার সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারীরা চলাচল করে। সম্রাটের বাড়ি বিশ্বনাথ থানার লামাকাজী আতাপুর গ্রামে। তিনি বর্তমানে আম্বরখানার শুভেচ্ছা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা।
সিলেট মহানগর পুলিশের ডিসি (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পূর্বে ঘটে যাওয়া ঘটনাটির কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। এরই মধ্যে আসামিদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, আমরা কামাল হত্যাকাণ্ডটিকে রাজনৈতিক লেবাস দিতে চাইনা। আমরা চাই হত্যাকারী যারাই হোক তারা যেন দ্রুত গ্রেপ্তার হয়। বিএনপি কামালের মৃত্যুতে তিনদিনের শোক পালন করছে। ১৯ নভেম্বরের বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগে আসামিদের গ্রেপ্তার করা না হলে ওই সমাবেশ থেকে কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। বলে জানান তিনি।