খেলাধুলা

শেন ওয়ার্নের ভাস্কর্য, কলিংউডের ছবি ও পেছনের গল্প

ইয়ারি নদীর পাশের ওয়াকয়ে ধরে হেঁটে আসছিলেন। গন্তব‌্য মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের (এমসিজি) সবুজ গালিচা। একটু পরই দলের অনুশীলন। পার্কের উচুঁ-নিচু পথ পেরিয়ে পল কলিংউড স্টেডিয়ামের প্রবেশপথে একটি ভাস্বর্যের সামনে এসে থমকে দাঁড়ান। ওই ভাস্কর্যের বিশালত্ব তাকে কাছে টেনে নেয়।

টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্মস্থান মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের সাউদার্ন গেটের ঠিক বাইরে শোভা পাচ্ছে শেন ওয়ার্নের ভাস্কর্য। তার ঐতিহাসিক বোলিং অ‌্যাকশনের এই ভাস্বর্যটি ছয় মাস সময় নিয়ে বানিয়েছেন শিল্পী ও ভাস্কর লুই লোম্যান। সময় নিয়ে কলিংউড সেই ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে ওয়ার্নকে স্মরণ করেন। এরপর ব‌্যাগ থেকে মোবাইল বের করে কয়েকটা ছবি তুলে নেন।

ওয়ার্ন মানে খেলার মাঠে ২২ গজে শুধু ব‌্যাটিং-বোলিংয়ে সীমাবদ্ধ নয়। মাঠে তার উপস্থিতি, তার স্লেজিং, শরীরি ভাষা— সবকিছুই ছিল প্রতিপক্ষের জন‌্য হুমকি। ইস্পাত দৃঢ় মনোবল, হার না মানা মানসিকতায় ওয়ার্ন ছিলেন অনন‌্য, অসাধারণ। কিন্তু ৫২ তেই পৃথিবীর পথ থমকে যায় ওয়ার্নের। এজন‌্য দায়ী তার উশৃঙ্খল জীবন, বেপরোয়া চলাফেরাসহ কত কি!

খেলোয়াড়ী জীবনে কলিংউডকে কম ভোগাননি ওয়ার্ন। শুধু যে স্পিনেই কলিংউডকে বেসামাল বানিয়েছেন তেমনটা নয়। স্লেজিংয়ে ইংলিশ অলরাউন্ডারকে এলোমেলো করেছেন। ২০০৫ সালে ইংল‌্যান্ড যেবার অ‌্যাশেজ জিতল, সেবার সরকারের পক্ষ থেকে স্কোয়াডের প্রত‌্যেক খেলোয়াড়কে এমবিই (ব্রিটিশ এম্পায়ার) দেয়া হয়েছিল। কলিংউড মাত্র এক ম‌্যাচ খেলেই পেয়েছিল সেই সম্মান। ওভালে সেই ম‌্যাচে রান করেছিলেন ৭ ও ০।

পরের অ‌্যাশেজে কলিংউডকে সামনে পেয়ে ওয়ার্ন মন্তব‌্য করেন, ‘তুমি এমবিই পেয়েছ, ঠিক বলছি না? ওভালে ৭ রান করার জন‌্য? তুমি একটা বিরক্তিকর? মাঠে শুধু কলিংউডকে এভাবে বলেননি ওয়ার্ন। নিজের অটোবায়োগ্রফি ‘নো স্পিন’ যুক্তরাজ‌্যে প্রোমোট করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি এখানো ভেবে উঠতে পারি না। কলিংউড কিভাবে এমবিই পাবে। কলিংউড যদি এমবিই পেয়ে থাকে, আমি তো নাইটহুড পেতে পারি। নাকি? আমার পাওয়া উচিত।’

তবে ২০১৭ সালে নিজের মন্তব‌্য ফিরিয়ে নিয়ে কলিংউডকে প্রশংসায় ভাসিয়েছিলেন ওয়ার্ন, ‘কলি নিজের কঠিন মনোবল ইংল‌্যান্ড দলে ফিরিয়ে এনেছে। ওর নেতৃত্বে ইংল‌্যান্ড দলে দৃঢ় মানসিকতা ফিরেছে। এমবিই স্বীকৃতি তাকে ফিরিয়ে দিতে চাই। এই মুহুর্তে তার অধীনে ইংল‌্যান্ড সীমিত পরিসরে শক্তিশালী দল হয়ে উঠেছে।’

২২ গজ, ইন ফিল্ড বা অফ ফিল্ড ওয়ার্ন-কলিংউডের সম্পর্কটা খুব একটা জমতো না। মাঠের চিরশত্রু ওয়ার্ন পরপারে পা বাড়ানোয় সব ভুলে কিংবদন্তিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করলেন কলিংউড। ওয়ার্নের ভাস্কর্যের ছবি তুলে কলিংউড বুঝিয়ে দিয়েছেন, পৃথিবীটা খেলার মাঠের থেকেও বিশাল। সেই বিশাল ভুবনে ওয়ার্ন অনন‌্য একজন হয়ে আছেন। যাকে পরম শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায় স্মরণ করা যায়।