চমক দেখাতে পারে অস্ট্রেলিয়া। এ শহরে যত উঁচু স্থাপনা আছে সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকবেই থাকবে। যেমন, সিডনির প্রাণ হার্বার ব্রিজের চূড়ায় উঠতে চাইলে সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। অ্যাডিলেড ওভালের প্রায় বিশাল উচুঁ স্থাপনার চূঁড়ায় উঠে আপনি হাঁটতে পারবেন।
১৮৫৩ সালের স্টেডিয়াম মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের চিত্রটাও একই রকম। স্থপিত হওয়ার পর নানা সংস্কার কাজ করেছে ঐতিহাসিক এমসিজি। কিন্তু টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্মস্থানের রুফটপ বা ছাদ পরিবর্তন হয়নি কখনো। বরং দিনকে দিন আকর্ষণীয় হয়েছে। সেই আকর্ষিত স্থানেই শনিবার এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্ট অধিনায়ক বাবর আজম ও জস বাটলার অফিসিয়াল ফটোসেশনে অংশ নিলেন।
বাবরকে সেখানে যেতে মানাতেই হয়েছে আইসিসির। উচ্চতার ভয় থাকায় বাবর যেতে চাননি। পরবর্তীতে নানাভাবে তাকে বুঝিয়ে পাঠানো হয়েছে। এজন্য বাটলারকে অপেক্ষাও করতে হয়। তাইতো চূড়ায় উঠার ঠিক আগে হাসিমুখে বাবরকে প্রশ্নই করে বসেন বটলার, ‘উচ্চতা নিয়ে ভয় আছে?’ হাসিমুখে বাবর সেই পরিস্থিতি সামলে নেন।
অধিনায়ক হওয়ার বেশ দায়িত্বও আছে। অনুশীলন, ম্যাচ পরিকল্পনা, গ্রুপ মিটিং এসব তো নিত্তনৈমত্তিক ঘটনা। দলের জন্য নিজের কাজ করার পাশাপাশি আয়োজকের বিভিন্ন আয়োজনেও অংশগ্রহণ করতে হয়। ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে রীতি অনুযায়ী হয়ে থাকে। কিন্তু ফাইনালের সংবাদ সম্মেলন মানেই বাড়তি আগ্রহ। সেই আগ্রহ থেকেই অধিনায়কদের সংবাদ সম্মেলন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতম হয়। বাবরেরটা ১৩ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের। বাটলারের ১৩ মিনিট ৪২ সেকেন্ড। দুপুর ১২টায় বাবরের সংবাদ সম্মেলন চলাকালেই হাজির বাটলার।
ইংলিশ অধিনায়ক মাইক্রোফোনের সামনে বসার আগে বল, স্টাম্প, ব্যাটের স্টিকারে অটোগ্রাফ দেন। বাবর এসব কাজ সারেন আগেভাগেই। সেখান থেকে দুজনকে রুফটপে নিয়ে যাওয়া হয় এরপর দর্শনীয় ইয়ারা নদীর পারে। এমসিজি স্টেডিয়াম ইয়ারা নদীর খুব কাছেই। নদীর পার ঘেঁষে থাকা ইয়ারা পার্কের পরই নব্বই হাজার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়াম মাথা তুলে দাঁড়িয়ে।
এসবের ভিড়ে বাটলার নিজের অনুশীলন চালিয়ে গেছেন ঠিকই। ইংল্যান্ড দুপুর দুইটার পর এমসিজিতে অনুশীলন করে। শুরুতে ফুটি খেলার পর ফুটবল নিয়ে মেতে উঠেন মঈন আলী, অ্যালেক্স হেলসরা। এরপর কেউ ফিল্ডিং অনুশীলন করেছেন। কেউ গিয়েছেন নেটে। বাটলার নিজের কাজ শেষে মাঠে কয়েক চক্কর দৌড়ান। এরপর নেটে ব্যাটিং করে এমসিজির সবুজ গালিচায় উইকেট কিপিং অনুশীলন করেন। সেমিফাইনালে ভারতকে ১০ উইকেটে উড়িয়ে দেওয়ার পর ইংল্যান্ড যতটা ফাইনাল নিয়ে সিরিয়াস, পাকিস্তান ততটাই চনমনে।
নিজেদের বেশ হালকা মেজাজে রেখেছে ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা। দলীয় অনুশীলন হয়নি। তবে পাকিস্তানের সাংবাদিকদের থেকে জানা গেল, দলীয় বৈঠক হয়েছে কয়েকবার। যেখানে ম্যাচ নিয়ে আগাম চিন্তা না করে নিজেদের প্রক্রিয়া অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। বাবর আজমের সংবাদ সম্মেলনে সেই আঁচ কিছুটা পাওয়া গেছে, ‘চাপ তো আছেই। চাপ থাকবেই। তবে চাপ যতটা কাটিয়ে উঠতে পারব, পারফর্ম করার সম্ভাবনা ততই বাড়বে। দল হিসেবে এবং অধিনায়ক হিসেবে চাওয়া থাকবে শান্ত থাকা এবং বিশ্বাস রাখা। তাতে ফলাফল ভালো হবে আশা করি।’
বাটলার প্রতিপক্ষকে সমীহ করার পাশাপাশি নিজেদের খেলায় মনোযোগী, ‘আমরা সম্প্রতি বেশ কয়েকবার খেলেছি। তবে এবারের কন্ডিশনটা ভিন্ন। আমরা জানি তারা ভালো দল। তবে বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচের উত্তেজনা, আবহ সব সময়ই আলাদা। আমরা তাদের দিকেও নজর রাখছি। পাশাপাশি নিজেদের খেলা নিয়েও মনোযোগী। ভালো কিছু করতে হলে আমাদের সেরা ক্রিকেটাই খেলতে হবে।’
২০১৯ বিশ্বকাপ জিতেছেন বাটলার। বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দ তিনি বোঝেন। সেই স্বাদ আরও একবার পেতে চান উইকেটরক্ষক অধিনায়ক। বাবরের হাতে নেই কোনো শিরোপা। এবারের শিরোপা জিতে বাবর জায়গা করে নিতে পারেন অনন্য উচ্চতায়। যে উচ্চতা নিশ্চিতভাবেই এমসিজির উচ্চতাকেও হার মানাবে।