খেলাধুলা

পাকিস্তানের ‘মিরাকল অব নাইন্টিন নাইন্টি টু’ নাকি ইংল‌্যান্ডের নতুন গল্প

টাইমলাইনে করে কেবল ত্রিশ বছর পেছনে যেতে হবে। মঞ্চ একই, শিরোপা নির্ধারণী ফাইনাল। দলগুলো এক, ইংল‌্যান্ড ও পাকিস্তান। ভেন্যুও এক, মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড। তাহলে কি যে ফল ত্রিশ বছর আগে হয়েছিল সেটাই হতে যাচ্ছে? যদি এমন কিছু হয়ে যায় তাহলে পাকিস্তানের জন‌্য হবে ‘মিরাকল অব নাইন্টিন নাইটি টু’। আর যদি ইংল‌্যান্ড শিরোপা পায় তাহলে ইতিহাস নতুন করে লেখা হবে। 

ইংল‌্যান্ড ও পাকিস্তান দুই দলই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে পিঠাপিঠি সময়ে। পাকিস্তান ২০০৭ সালে ভারতের কাছে শিরোপা হাতছাড়া করার পর ২০০৯ সালেই এই ট্রফি জিতে নেয়। ইংল‌্যান্ডের অপেক্ষা ফুরায় পরের আসরে, ২০১০ সালে। তেরো বছর পর পাকিস্তান এবার আবার ফাইনালে। মাঝে ইংল‌্যান্ড ২০১৬ সালে ফাইনাল খেললেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে যায়। দুই দলের জন‌্যই আজকের ফাইনাল নিজেদের শিরোপা ক্ষুধা মেটানোর বড় সুযোগ। কার মুখে ফুটবে হাসি তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আজ সন্ধ‌্যা পর্যন্ত। 

ফাইনালের আগে ঘুরেফিরে আলোচনায় আসছে পাকিস্তানের ১৯৯২ এর ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়। সেবার পাকিস্তানকে কেউ ফেভারিট মনে করেনি। তাদের শুরুটাও হয়েছিল প্রচণ্ড বাজেভাবে। প্রথম দুই ম‌্যাচ হারের পর শেষ তিন ম‌্যাচ জিতে শেষ দিনে গিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট পায় ইমরান খানের দল। পরবর্তীতে সেমিফাইনালে নিউ জিল‌্যান্ডকে উড়িয়ে দেয় পাকিস্তান। ফাইনালে তাদের সঙ্গে দেখা হয় ইংল‌্যান্ডের। ইংলিশদের মাটিতে নামিয়ে পাকিস্তান জিতে নেয় বিশ্বকাপ। তাদের এবারের গল্পটাও একই রকম। প্রথম দুই ম‌্যাচে ভারত ও জিম্বাবুয়ের কাছে হার। তৃতীয় ম‌্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে জয়ের পর পাকিস্তান ছন্দ ফিরে পায়। এরপর নেদারল‌্যান্ডস ও বাংলাদেশকে তারা দাঁড়াতে দেয়নি। শেষ দিনে শেষ দল হিসেবে বাবর আজমরা নিশ্চিত করে সেমিফাইনাল। শেষ চারের লড়াইয়ে আবার নিউ জিল‌্যান্ডের সঙ্গেই তাদের দেখা। পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ মঞ্চে কখনও সেমিফাইনালে হারাতে না পারা নিউ জিল‌্যান্ড এবারও পারেনি। সিডনিতে প্রায় ৩৫ হাজার দর্শকের সমর্থন নিয়ে পাকিস্তান উঠে যায় ফাইনালে। 

ত্রিশ বছর আগে ইমরান খানের দল যাদের হারিয়ে ফাইনাল জিতেছিল এবারও তাদের মুখোমুখি বাবররা। তাই তো টাইমলাইনের যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। বাবর আজমও সেই সুখস্মৃতি থেকে আত্মবিশ্বাসী হচ্ছেন, “যখন বোর্ডের চেয়ারম্যান আসে এবং দলকে বিশ্বাস জোগায়, আমাদের আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায়। চেয়ারম্যান এসে তার ১৯৯২ বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা যেভাবে আমাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন এবং যেভাবে ভরসা জুগিয়েছেন… তিনি বলেছেন যে, ‘বিশ্বাস রাখো ও রিল্যাক্সড থাকো। নিজের ক্রিকেট খেলো।’ তার কথায় আমাদের বিশ্বাস বেড়ে গেছে।”

শুরুটা ভালো না হলেও শেষটা নিজেদের মতো করে করতে চান বাবর, ‘ অবশ্যই...আমাদের শুরুটা ভালো ছিল না। এরপর যেভাবে দল ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বাঘের মতোই খেলেছে সবাই। আশা করি এটা ধরে রাখবো আমরা এবং যে ছন্দ আমাদের আছে, তা ফাইনালেও কাজে লাগাবো। গত চার ম্যাচে দল হিসেবে যেমন, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সও ছিল দারুণ কিছু। আগেও আমরা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলেছি, এশিয়া কাপে ফাইনাল খেলেছি। এই ধারাবাহিকতা তাই বেশ কিছু সময় ধরেই চলছে। তবে আমাদের স্বপ্ন ট্রফি জয়ের। আমাদের নিজেদের ওপর বিশ্বাস আছে, পরস্পরের প্রতি আস্থা আছে যে আমরা পারবো। ফাইনালে উঠেছি, চেষ্টা থাকবে ভালো করার।’

ইংল‌্যান্ড ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ব‌্যর্থতার পর নিজেদের খোলনলচে পাল্টে দিয়েছে। এখন যখন তখন যাকে তাকে ২২ গজের লড়াইয়ে স্রেফ উড়িয়ে দেয়। ২০১৯ বিশ্বকাপের ফলাফল তার প্রমাণ। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জিতেছিল তারা। এরপর গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালও খেলেছিল। এখন শিরোপা থেকে এক পা দূরে দাঁড়িয়ে জস বাটলার। নিকট অতীতে বিশ্বকাপ জয়ের ভালো স্মৃতি থাকায় বাটলার বেশ আত্মবিশ্বাসী নিজেদের নিয়ে, ‘আমি সামনে তাকিয়ে আছি অনেক রোমাঞ্চ নিয়ে এবং এই ছেলেদের ওপর আমার বিশ্বাস প্রবল। কোচরা যারা আমাদের নিয়ে কাজ করছেন, তাদের ওপরও ভরসা অনেক।  ছেলেবেলায় বেড়ে ওঠার সময়, ভাই-বোনদের সঙ্গে বাড়ির আঙিনায় খেলার সময়টায় যখন আমরা ট্রফি উঁচিয়ে ধরার অভিনয় করতাম, সেই সময়টায় ফিরে যাচ্ছি এখন। এখন বাস্তবেই সেটি করার সুযোগ এসেছে, অবিশ্বাস্যরকমের স্পেশাল এটি।’ 

ফাইনালের মঞ্চ প্রস্তুত থাকলেও সব আয়োজনে জল ঢেলে দিতে পারে বেরসিক বৃষ্টি। স্থানীয় সময় সন্ধ‌্যা সাতটায় ম‌্যাচ শুরু হবে। সকালে রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া থাকলেও দুপুরের পর থেকে বৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে। সন্ধ‌্যার পর বৃষ্টির সম্ভাবনা ৬০ ভাগ। যদি বৃষ্টিতে দুই দল মাঠে না নামতে পারে আগামীকাল রিজার্ভ ডে রাখা হয়েছে। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সোমবারও বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল। তাই তো ফাইনাল নিয়ে মাঠের লড়াইয়ের পাশাপাশি প্রকৃতি নিয়েও উৎকণ্ঠায় থাকতে হচ্ছে দুই দলকে।