নাটোরে সারের কোনো সংকট নেই। এ ব্যাপারে কেউ কোনো অপপ্রচার করলে বা বিভ্রান্তি ছড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদ।
ডিলাররা অবৈধ কর্মকাণ্ড ঘটালে কোমরে দড়ি বাঁধতেও দ্বিধা করা হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সোমবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে সার ও বীজ মনিটরিং সভায় তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, নাটোরে কোনো প্রকার সারের সংকট নেই বরং পর্যাপ্ত মজুদ আছে। আরও অতিরিক্ত সার বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
প্রয়োজনে আরও সার প্রাপ্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সময় ও চাহিদা মতো কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করা হবে। যদি কেউ সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিসহ কৃষকদের কাছ থেকে দাম বেশি নেয় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ সার নিয়ে অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি ছড়ালে তাদের বিরুদ্ধেও কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শামীম আহমেদ বলেন, ‘সারা বিশ্বে যখন বিভিন্ন বিষয়ে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে, তখন আমরা নির্বিঘ্নে আছি। আমাদের দেশে কোনো হাহাকার বা সংকট নেই। প্রধানমন্ত্রী কৃষির ওপর যে গুরুত্ব দিয়েছেন, আমরাও তা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখতে চাই। অর্থনীতির প্রাণ হচ্ছে কৃষি, তাই কৃষি ও কৃষকের পাশে আমরা দাঁড়াতে চাই।’
এ সময় সার ডিলারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যদি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করেন, অবৈধভাবে ব্যবসা করতে চান তাহলে কোমরে দড়ি বাঁধতেও দ্বিধা বোধ করা হবে না। ভালো ব্যবসা করলে সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়াসহ ব্যবসায়ীদের পাশে থাকবে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ।
কৃষি ও শিল্প বিকাশে সমন্বয় করে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে জেলা প্রশাসক সার ডিলারদের বলেন, রিসিভ ছাড়া কেউ কোনো প্রকার সার বিক্রি করতে পারবেন না। এ সময় গণমাধ্যম কর্মীদের সঠিক তথ্য যাচাই-বাছাই করে সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানান তিনি।
নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিস অয়োজিত এ সভায় সভাপতির দায়িত্ব পালন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোজিনা আক্তার। উপস্থিত ছিলেন নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান।
জেলা পুলিশ সুপার বলেন, বর্তমান সরকার কৃষি ও কৃষকের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সার, বীজসহ সকল কৃষি উপকরণ সহজলভ্য হওয়ায় কৃষকরা উন্নয়ন করছেন। কৃষির উন্নয়নের ফলে দেশের মানুষ আজ তিনবেলা খেতে পারছে। অথচ একটি চক্র সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছে। পুলিশ সুপার বলেন, দেশে সারের কোনো সংকট নেই। সার নিয়ে কোনো প্রকার অপপ্রচার, কিংবা সঠিক তথ্য যাচাই বাছাই না করে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কিশোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রতিটি ডিলারের কাছে সার বিতরণ কার্যক্রমের জন্য আমাদের উপসহকারী অফিসাররা নিয়মিতভাবে তদারকি করে আসছেন। সার নিয়ে ছয় নয় করার সুযোগ নেই ডিলারদের। আমাদের কাছে তথ্য আছে একটি মহল কৃষি বিভাগের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
সভা শেষে নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফৌজিয়া ফেরদৌস বলেন, বর্তমানে উপজেলায় বিসিআইসি ও বিএডিসি মিলে ১৭ জন সার ডিলার আছেন। তাদের অধীনে ১৬০ মেট্রিক টন ইউরিয়া, ৬২ মেট্রিক টন টিএসপি, ১৯০ মেট্রিক টন ডিএপি ও ৪৪ মেট্রিক টন এমওপি সার মজুদ আছে। উপ-বরাদ্দ পাওয়া গেছে ২৫০ মেট্রিক টন সার।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা ড. মো. ইয়াছিন আলী, নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল কালাম, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিরিন আক্তার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম সরদার, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কিশোয়ার হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস শুকুর, মাধনগর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার মৃধা, রঈস উদ্দিন রুবেল, বিসিআইসি সার ডিলার নাসির উদ্দিন হক প্রমুখ। পরে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে গ্রীষ্মকালীন পিয়াজ প্রদর্শন করা হয়।