আয়োজক: মেক্সিকো, দল: ২৪, ভেন্যু: ১২, ফাইনাল: পশ্চিম জার্মানি ও আর্জেন্টিনা, জয়ী: আর্জেন্টিনা (৩-২), ইতিহাস: ‘হ্যান্ড অব গড’র কথা মনে আছে? মনে আছে উনবিংশ শতাব্দীর সেরা গোলের কথা? দুটি দৃশ্যেই রয়েছেন ফুটবল কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনার ছবি। এই বিশ্বকাপে ‘মেক্সিকান ওয়েব’ নজর কাড়ে সবার।
‘হ্যান্ড অব গড’র কথা মনে আছে? মনে আছে উনবিংশ শতাব্দীর সেরা গোলের কথা? একটু রিওয়াইন্ড করে দেখুন- মনে পড়ছে কিছু! হয়তো চোখের সামনে ভেসে আসছে দিয়াগো ম্যারাডোনার ছবি? হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন। আর যারা ধরতে পারেননি তারা হয়তো ফুটবলের সমর্থক নন!
‘হ্যান্ড অব গড’ এবং শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবে নির্বাচিত গোল দুটিই করেন আর্জেন্টাইন যাদুকর ম্যারাডোনা। সেটাও ১৯৮৬ বিশ্বকাপে। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কুখ্যাত ‘হ্যান্ড অফ গড’ গোল করে ম্যারাডোনা হয়েছিলেন সমালোচিত। হেডের পরিবর্তে হাত দিয়ে গোল করে ম্যারাডোনা জড়িয়েছিলেন বিতর্কে। কিন্তু খানিক বাদে মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে ম্যারাডোনা যা করে দেখান তাতে অমরত্ব পেয়ে যান ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে। ৬২ মিটার দূর থেকে বল নিয়ে ১৩ বার স্পর্শ করে ইংল্যান্ডের জালে বল পাঠান ম্যারাডোনা। এ গোলটি করতে ম্যারাডোনা কতজন খেলোয়াড়কে পরাস্ত করেছিলেন জানেন?
মাঝ মাঠ থেকে ডি বক্সের ভেতর পর্যন্ত মোট ছয়জনকে পরাস্ত করে ইংল্যান্ডের জালে বল পাঠান ম্যারাডোনা। তাতেই অমরত্ব। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওই জয়ের পর আর্জেন্টিনাকে আর থামানো যায়নি, থামানো যায়নি ম্যারাডোনাকে। পুরো প্রতিযোগিতায় পাঁচ গোল করেন, সতীর্থদের দিয়ে করান আরও পাঁচটি গোল। ফাইনালে পশ্চিম জার্মানিকে ৩–২ গোলে হারায় আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনা জেতে বিশ্বকাপের ১৩তম আসর, নিজেদের দ্বিতীয়।
বিশ্বকাপের ১৩তম আসর বসেছিল মেক্সিকোতে। ৩১ মে থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত চলে বিশ্বকাপ। দ্বিতীয়বারের মতো ২৪ দল নিয়ে বসে বিশ্বকাপের ১৩তম আসর। এর আগের বছর স্পেন বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ায় সেবার ইউরোপিয়ান দলগুলো বিশ্বকাপ আয়োজনের যোগ্যতা হারায়। শুরুতে কলম্বিয়াকে বিশ্বকাপের আয়োজনের জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল। কিন্তু আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না হওয়ায় ১৯৮২ সালে তারা বিশ্বকাপ আয়োজনে অপরাগতা প্রকাশ করে। পরের বছর মে মাসে মেক্সিকোকে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য নির্বাচন করা হয়। কানাডা, ডেনমার্ক এবং ইরাক প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নেয়।
সেবার ভিন্ন ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপ। ২৪ দল থেকে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে ১২ দল। এরপর সেখান থেকে শুরু হয় নকআউট পর্ব। মেক্সিকোর ৯টি শহরের ১২টি মাঠে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপ। আর্জেন্টিনা এবং পশ্চিম জার্মানির ফাইনাল ম্যাচটি হয় মেক্সিকো সিটির এস্তাদিও অ্যাজতেকায়।
বিশ্বকাপে ফ্রান্স হয়েছিল তৃতীয়, বেলজিয়াম চতুর্থ। মোট ৫২ ম্যাচে গোল হয়েছিল ১৩২টি, ম্যাচ প্রতি গোল ২.৫৪টি। সেবারই দর্শকরা আলাদাভাবে নজর কেড়েছিল। সারাবিশ্বে ‘মেক্সিকান ওয়েব’ নামে একটি ঢেউ পরিচিত আছে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে সেই ‘মেক্সিকান ওয়েব’ নজর কাড়ে সবার। পুরো আসরে মোট ২৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩১ জন দর্শক মাঠে বসে খেলা দেখেছিল। প্রতিযোগিতায় শীর্ষ গোলদাতা ছিলেন ইংল্যান্ডের গ্যারি লিনেকার এবং সেরা খেলোয়াড় বিশ্বকাপ জয়ী দলের দিয়াগো ম্যারাডোনা।