অর্থনীতি

বাজেট সংশোধনের কাজ শুরু

চলতি অর্থবছরের বাজেট সংশোধনের কাজ শুরু হয়েছে। অর্থ সংকট মোকাবিলায় এবারই প্রথম বাজেট সংশোধনে কৃচ্ছ্রতা অবলম্ব করা হচ্ছে। সংশোধিত বাজেট প্রণয়নে কৃচ্ছ্রতার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে অনুসরণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে-গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। আর বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ২৫ শতাংশ সাশ্রয় করতে হবে। জরুরি ও অপরিহার্য ক্ষেত্রে আপ্যায়ন ব্যয়, ভ্রমণ ব্যয়, মনিহারি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ৫০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। সংশোধিত বাজেট প্রণয়নে কোনোভাবেই অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

‘মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো পদ্ধতির আওতাভুক্ত মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন (পরিচালন ও উন্নয়ন) প্রণয়ন’ সংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার জারি করা এক পরিপত্রে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। অর্থ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আনিসুজ্জামানের সই করা পরিপত্রটি ইতোমধ্যে সব মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। পরিপত্রে সব মন্ত্রণালয়/বিভাগকে নিজ নিজ সংশোধিত বাজেটের প্রাক্কলন নির্ধারিত ফরমে আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।

পরিপত্রের আলোকে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। নির্দেশ অনুযায়ী, পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট এবং গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে এবং বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ২৫ শতাংশ সাশ্রয় করতে হবে। এসব খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ অন্য কোনো খাতে পুনঃউপযোজন করা যাবে না। এছাড়া জরুরি ও অপরিহার্য ক্ষেত্রে আপ্যায়ন ব্যয়, ভ্রমণ ব্যয়, মনিহারি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ৫০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে; নতুন বা প্রতিস্থাপক হিসেবে সবধরনের যানবাহন ক্রয় (মোটরযান, জলযান, আকাশযান) বন্ধ রাখা এবং সরকার ও প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থায়নে সবপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সবধরনের বিদেশ ভ্রমণ পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

পরিপত্রে কৃচ্ছ্রসাধনের বিষয়ে আরও বলা হয়, ‘পরিচালন বাজেটের অধীন ভূমি অধিগ্রহন’ ও ‘যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি (কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক’, ‘বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি’, ‘আসবাবপত্র ও ‘অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি’) খাতে ব্যয় স্থগিত থাকবে এবং ভবন ও স্থাপনাগুলো (‘আবাসিক ভবন’, ‘ অনাবাসিক ভবন’, ‘অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা’) খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের বিপরীতে নতুনভাবে কার্যাদেশ প্রদান করা যাবে না। তবে ইতোমধ্যে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে কেবল এরূপ ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দের ৫০ শতাংশের বেশি ব্যয় করা যাবে না। এসব খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ অন্য কোনো খাতে এবং অন্য কোনো খাত থেকে এসব খাতে পুনঃউপযোজন করা যাবে না।

পরিপত্রে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার অবশ্যই মূল বাজেটে উল্লেখিত মোট ব্যয়সীমার (পরিচালন ও উন্নয়ন) মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে এবং কোনোভাবেই অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করা যাবে না। একই সাথে উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে কোনো অর্থ অ-ব্যয়িত থাকবে বলে অনুমিত হলে ওই অ-ব্যয়িত অর্থ কোনোক্রমেই পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না।

পরিপত্রে সংশোধিত ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি’ (এডিপি) প্রণয়নে ১৪ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্প সংখ্যা সীমিত রাখতে হবে এবং মূল সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দহীন কোনো প্রকল্প রাখা যাবে না। সরকারের কৌশলগত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের আলোকে অগ্রাধিকার বাছাই করে অন্যান্য কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিতে হবে। সংশোধিত এডিপির মূল অংশে বরাদ্দবিহীন কোনো প্রকল্প রাখা যাবে না। অন্য দিকে চলতি অর্থবছরের এডিপি-বহির্ভূত যেসব প্রকল্প ইতোমধ্যে অনুমোদিত হয়েছে এবং যেসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেসব প্রকল্প সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

চলতি অর্থবছরে বাস্তবায়ন কাজ শেষ হবে-এমন সব প্রকল্পের বিপরীতে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখতে হবে। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রকল্প সহায়তার অংশ সম্পূর্ণ ব্যয় করা যাবে, তবে এ ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয়ের অংশে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখতে হবে।

অন্যান্যের মধ্যে-বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা-উত্তর পুনর্বাসন সম্পর্কিত প্রকল্প এবং এলাকা/অঞ্চলভিত্তিক সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্পগুলোকে সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্তকরণে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে।

বাজেট পরিপত্রে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সংশোধিত পরিচালন ব্যয় প্রণয়নে সাত দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-পরিচালন ব্যয় প্রাক্কলনে পূর্ববর্তী দুই (২০১৯-২০ ও ২০২০-২১) অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম চার/পাঁচ মাসের ব্যয়ের ধারা বিবেচনায় নিতে হবে। তবে শুধু বেতন ভাতা খাতে ব্যয়ের হিসাব প্রণয়নে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের প্রকৃত ব্যয়ের হিসাব বিবেচনায় নিতে হবে। এছাড়া মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া সরবরাহ ও সেবা খাতের অন্তর্ভুক্ত কোনো আইটেমের বরাদ্দ বাড়ানো যাবে না এবং মূল বাজেটে সংস্থান নেই এমন কোনো সম্পদ সংগ্রহের জন্য সংশোধিত বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা যাবে না।