অর্থনীতি

নতুন বাজেটের আকার হতে পারে ৭ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে যা আগামী জুলাই থেকে শুরু হবে তার আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। যা চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে মূল বাজেটের চেয়ে ১০ দশমিক ৬৩ ভাগ বেশি। আবার সংশোধিত বাজেটের প্রস্তাবিত আকার থেকে বাড়বে ১৪ ভাগ। এই বাজেটে ঘাটতিই ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। মূল বাজেটে ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রাবিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের’ সভায় এসব  সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এই সভাটি চলতি অর্থবছরের প্রথম সভা।

সূত্র জানায়, সভায় আগামী অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরের জন্য জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির একই হার নির্ধারিত রয়েছে। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সাড়ে ৬ ভাগে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর মূল্যস্ফীতি হার প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৬ শতাংশ।

সূত্র জানায়, আশানুরূপ মাত্রায় বৈদেশিক সহায়তা অনিশ্চয়তা আর একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের শ্লথ গতিকে মাথায় রেখে আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে। এ কারণে আগামী ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরে বাজেটের চেয়ে ১০ দশমিক ৬৩ ভাগ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার বৃদ্ধি পেয়েছিল আগের বাজেটের তুলনায় সাড়ে ১২ ভাগের বেশি। আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার বৃদ্ধি টাকার চলতি মূল্যেই দুই ভাগের মতো কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ডলারের হিসাবে বাজেটের বরাদ্দ এবার গত বছরের তুলনায় আরও কমছে। আগামী অর্থবছরে বাজেট হচ্ছে পুরোপুরি গতানুগতিক। বড় রকমের কোনো কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রস্তাব থাকছে না এতে। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার মূল বাজেট থেকে ৩ শতাংশের বেশি কমানো হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার ধরা রয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর আকার কমিয়ে প্রাক্কলন করা হয়েছে ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। এতে বরাদ্দ কমছে ৩ শতাংশের মতো।

সভায় আগামী অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আদায়ের টার্গেট ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আদায় করতে হবে চার লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্য রয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরকে রাজস্ব আয়ের টার্গেট দেওয়া রয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।

সভার আলোচ্যসূচির মধ্যে ছিল, বাংলাদেশে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের অগ্রগতি এবং বিশ্ব ও জাতীয় অর্থনীতিতে ইতোমধ্যে সূচিত পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো (এমটিএমএফ) পর্যালোচনা। আর দ্বিতীয় বিষয় ছিল চলতি অর্থবছরসহ মধ্যমেয়াদি (২০২৩-২০২৪ হতে ২০২৫-২০২৬) সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর (এমটিএমএফ) সূচকগুলোর প্রক্ষেপণের ওপর আলোচনা ও অনুমোদন।

জানা গেছে, কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন আগামী অর্থবছরে বাজেট ও দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির একটি সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন। এর সঙ্গে দেশের মুদ্রাবাজারসহ আরও কিছু বিষয়ের ওপর বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। দেশে রফতানি বাণিজ্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়ব সচিব তপন কান্তি ঘোষ। সভাটি দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার পৌনে আট লাখ কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া ইচ্ছে ছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। আগামী বছরে বিদেশি সহায়তা কমে যেতে পারে। একই সঙ্গে দেশের ভেতর থেকেও রাজস্ব আদায়ের গতি শ্লথ হতে পারে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই নতুন অর্থবছরের বাজেটের আকার সাড়ে সাত লাখ কোটি টাকায় মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে আগামী এপ্রিল মাসে যখন কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল দ্বিতীয় সভায় অনুষ্ঠিত হবে সেখানে বাজেটের মূল আকারটি নির্ধারিত হবে।