প্রবল চাপে ছিলেন মুমিনুল হক। শেষ ৯ ইনিংসে দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেনি। ১৩ ইনিংস আগে পেয়েছিলেন শেষ ফিফটি। ব্যাটিংয়ে বিবর্ণ, পাশাপাশি দলও চালাতে পারছিলেন না। এজন্য অধিনায়কত্ব হারাতে হয়। পরে তাকে সরানো হলো জাতীয় দল থেকেও। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে ছেড়ে দেয়নি। ‘এ’ দলের হয়ে তাকে পাঠায় ভারতে, রান পাননি। কিন্তু নিয়মিত অনুশীলন ও ম্যাচ খেলার মধ্যে ছিলেন। দেশেও ‘এ’ দলের হয়ে ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে খেলেছিলেন। সেখানেও তার পারফরম্যান্স ছিল বিবর্ণ। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট হাল ছাড়েনি। এজন্যই তাকে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট স্কোয়াডে রাখা হয়েছিল। চট্টগ্রামে সুযোগ মেলেনি। ঢাকায় ছিল তার এসিড টেস্ট। এবার খারাপ করলেই দলছুট। কিন্তু মুমিনুল কোমর সোজা করে দাঁড়ালেন। রান করলেন অনায়াসে।
প্রবল আত্মবিশ্বাস, দৃঢ়চেতা মনোভাব ও নিজের স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ঢাকা টেস্টে ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৮৪ রান করেছেন মুমিনুল। দলীয় ছন্দ ও মনোযোগ হারানোয় তিন অঙ্ক ছোঁয়া হয়নি। নয়তো দ্বাদশ সেঞ্চুরিটা মুমিনুল পেয়েই যেতেন। দিন শেষে তার কথা জানা যায়নি। তবে দলের ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স জানালেন, মানসিকতা বদল ও আনন্দ নিয়ে ব্যাটিংয়ে সাফল্য পেয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। সিডন্স বলেছেন, ‘বাজে বল শাসনের পরিবর্তে সে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে ব্যাটিং করেছে যা তাকে এগিয়ে নিয়েছে। সে নিশ্চয় ভেবেছে, ‘আজআমি রান করবো।’ যখন আপনি এভাবে চিন্তা করবেন, ভালো করার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। আগে সে চিন্তা করতো সে কীভাবে ভালো বল পাবে এবং পরে রান করবে।’ তিনি যোগ করেন, ‘তার মানসিক উন্নতি হয়েছে। তাকে আমরা এক সপ্তাহে সেভাবেই গড়ে তুলেছি। তাকে আনন্দ নিয়ে ব্যাটিং করতে বলা হয়েছে। সে কিছু বল শক্তভাবে খেলেছে। মনে হয়েছে টি-টোয়েন্টিসুলভ। আমি নিশ্চিত নই এটা তাকে সাহায্য করেছে কি না। কিন্তু কিছু শট সে খেলেছে, যা তাকে সাহায্য করেছে। খারাপ হয়েছে যে সে সেঞ্চুরি পায়নি।’
কক্সবাজারে ভারতীয় ‘এ’ দলের বিপক্ষে দুই ইনিংসে ৪ ও ১৭ রান করেছেন মুমিনুল। দ্বিতীয় চারদিনের ম্যাচে ৪ ও ১৫ রানের ইনিংস খেলেন। তার আগে তামিলনাড়ুর বিপক্ষে ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। জাতীয় লিগ, বিসিএলে রান করতে পারেননি। এজন্য নির্বাচকরা তাকে স্কোয়াডে রাখলেও চট্টগ্রামে মাঠে নামাননি। তাকে ব্যর্থতা ভুলতে সময় দিয়েছিল বলেই জানা গেছে। সিডন্স বলেছেন, ‘এটা (চট্টগ্রামে না খেলানো) নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত। তবে সে শেষ চার ইনিংসে বাংলাদেশে ১০ রানের বেশি করতে পারেনি যা ছিল চিন্তার কারণ। আমরা তাকে বিশ্রাম দিয়েছিলাম। আমরা চট্টগ্রামে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করেছিলাম। তাকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কিছুটা সময় দিয়েছিলাম, যেন সে ব্যর্থতাগুলো ভুলে যায়। যেন সে ভালোভাবে ফিরে আসতে পারে। আমাদের তিন নম্বর জায়গা দুশ্চিন্তার। এজন্য আমরা তাকে সেখানে পাঠিয়েছি। এটা আজ কাজে এসেছে। সে দারুণ পারফর্ম করেছে।’
১৫৭ বলে ১২ চার ও ১ ছক্কায় ৮৪ রান করেছেন মুমিনুল। সেঞ্চুরির সুযোগ থাকলেও পাননি। যা তাকে নিঃসন্দেহে পোড়াচ্ছে। দ্বিতীয় ইনিংসে আরও ভালো করার সুযোগ পাবেন, সেটা মুমিনুল কাজে লাগাতে পারবেন তো?