জাতীয়

বছরজুড়েই মশা আর মশা

কালের চাকায় ঘুরে বিদায় নিচ্ছে ২০২২ সাল। রাশিয়া-ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি পণ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে রাজধানীর নিম্নআয়ের মানুষের কষ্টের বছর এটি। এর মধ্যে, ঢাকার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) বাসিন্দাদের বেশ কিছু জনদুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। যার মধ্যে মশার উৎপাত ও পুরান ঢাকার জলাবদ্ধতা অন্যতম। বিভিন্ন উদ্যোগ ও বিশাল অর্থ বরাদ্দ দিয়ে ‘মশা মারতে কামান দাগলেও’ তা কাজে আসছে না।

চলতি বছর এডিস মশার উৎপাত বেড়েছে। অন্য বছর শীত এলে এডিস মশার উৎপাত কমে যায়। ডেঙ্গুর সংক্রমণও কমে। তবে এবার ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়েও প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।   

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬১ হাজার ২৬৩ জন। যার মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৩৮ হাজার ৬২২ এবং ঢাকার বাইরের ২২ হাজার ৬৪১ জন। ডেঙ্গুতে এ বছর ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মারা গেছেন ২৭১ জন, যা দেশের ইতিহাসে এক বছরে মৃত্যুর হিসাবে রেকর্ড।

এদিকে, নভেম্বরের শেষ দিক থেকে ঢাকায় এডিস মশার প্রকোপ কিছুটা কমতে শুরু করেছে। হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীও কমেছে। এর মধ্যে, আবার শুরু হয়েছে কিউলেক্স মশার উপদ্রব। ফলে বছরজুড়ে মশার পেছনে ছুটছে সিটি কর্পোরেশন।

ঢাকায় মশা নিধনে কাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে এ কাজের ফলাফল নিয়ে ব্যাপক অসন্তুষ্টি নাগরিকদের।

তাদের অভিযোগ, মশা নিধনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঠিকমত ওষুধ ছিটায় না। মশার ওষুধের গুণগত মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। তারপরও এডিস মশা বাসাবাড়ির আঙিনায় জন্মায়- এমন কথা বলে দায় এড়িয়ে গেছে ডিএসসিসি। অথচ ডেঙ্গুজ্বরে আড়াইশ’র বেশি মানুষ মারা গেছেন। কিউলেক্স মশাও তারা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এডিস মশা জন্মায়। কিন্তু কয়েকবছর ধরে জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের কারণে সারাবছরই এডিস মশা জন্মাচ্ছে। এ মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএসসিসিকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ নগরের যে আয়তন ও ভবন, সে অনুযায়ী ডিএসসিসির জনবল নেই। প্রতিদিনই মশার লার্ভা জন্মানোর মতো নতুন নতুন জায়গা তৈরি হচ্ছে। তবে ডিএসসিসি তার সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ডিএসসিসির মধ্যে রায়েরবাগ, মুজাহিদ নগর, শনির আখড়া, জুরাইন, শ্যামপুর, কদমতলী, ডেমরা, নাসিরাবাদ এলাকায় সবচেয়ে বেশি কিউলেক্স মশার উপদ্রব রয়েছে।

রায়েরবাগের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সারাবছরই মশার আতঙ্কে থাকতে হয়। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে মশার উপদ্রব সবচেয়ে বেশি। অথচ এ এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের কোনো কর্মীকে মশার ওষুধই ছিটাতে দেখা যায় না।’

ঢাকার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবির বলেন, ‘ডিসেম্বর, জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে কিউলেক্স মশার উপদ্রব বাড়ে। এ মশা নিধনে নগরের সব ডোবা, নালা, খাল পরিষ্কার করা হয়েছে। সকাল-বিকেল মশার ওষুধ ছিটাচ্ছেন মশক নিধনে নিয়োজিত কর্মীরা।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘বাসাবাড়ির টব ও ছাদে বৃষ্টির পানি জমে যেন এডিস মশার বিস্তার না ঘটে, সেদিকে নজরদারি বাড়াতে কাউন্সিলরদের নির্দেশ দিয়েছি। সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার পর এই রোগের জীবাণুবাহী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের কার্যকর গবেষণা বাড়াতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এডিস মশার বিবর্তনের পরিবর্তন দেখছি। সময়সীমার পরিবর্তনও দেখছি। এ সম্পর্কে আমাদের পূর্বাভাস পাওয়া প্রয়োজন। বাসাবাড়ির আনাচে-কানাচে, বিভিন্ন সামগ্রী, চাকা, পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতলসহ বিভিন্ন পাত্রে বৃষ্টির স্বচ্ছ পানি জমে থাকছে। এসব স্থানে পানি জমে থাকার কারণে মশার বিস্তার ঘটছে।’