চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) কৌশলের মাধ্যমে জৈব্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপদ শাক-সবজি উৎপাদন করছেন কৃষকরা। রাসায়নিক সার, আর কিটনাশকের ব্যবহার না করেই জৈবসার, জৈব-বালাইনক, মালচিং পেপার ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
এদিকে সবজি উৎপাদন কম খরচ, অল্প পরিশ্রম হওয়ায় এখন এই পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে অন্য কৃষকদেরও।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের মোট ৫০০ জন কৃষককে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এসব কৃষকরা এখন ১০০ একর জমিতে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন। এছাড়াও সরকারি সহায়তার অংশ হিসেবে কৃষকরা বীজ, সার ও অনান্য কৃষি উপকরণ পাওয়ায় তাদের খরচ আরও কম হচ্ছে।
মোহাম্মদ সুজন নামের এক কৃষক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘অন্যের ১০ কাঠা জমি বর্গা নিয়ে শষা চাষ করছি। ফেরোমন ফাঁদ ও হলুদ কাগজে আঠালো ফাঁদের যথাযথ ব্যবহার করে পোকা দমন করছি। ফলে কিটনাশক ব্যবহার না করেই একেবারে প্রকৃতিক উপায়ে পোকাগুলো দমন করা যাচ্ছে। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে চলতি বছর ৬০-৭০ হাজার টাকা লাভের সম্ভাবনা আছে।’
মহানন্দা নদীর ধারের জমিতে শীতকালিন সবজি চাষ করছেন বাইরুল ইসলাম। তিনি আইপিএম পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদের উপকারিতা বোঝাতে গিয়ে বলেন, ‘সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে জৈব সার, বালাইনাশক স্প্রে, মালচিং পেপার ব্যবহার করে সবজি চাষাবাদ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। চড়া দামে রাসায়নিক সার আর কিটনাশক না কিনেই, জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করেই পোকা দমন করা যাচ্ছে।’
আব্দুর রউফ নামের অপর এক কৃষক বলেন, ‘সাধারণত কৃষকরা সার ও কিটনাশক প্রয়োগ করে সবজি উৎপাদন করে। কিন্তু আইপিএম পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে কোনো রাসায়নিক সার কিংবা বিষের প্রয়োজন হয় না। ফলে সাধারণ মানুষ নিরাপদ সবজি পাওয়ার পাশাপাশি কৃষকরাও লাভ করছেন। এতে করে ভোক্তার উপকার হচ্ছে, কৃষকেরও লাভ হচ্ছে।’
গোমস্তপুর উপজেলার উপসহকারী উদ্ভিদ ও সংরক্ষণ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আইপিএম পদ্ধতি চাষাবাদ করলে উৎপাদিত সবজিতে ক্ষতিকর পোকা দমন করা যায় খুব সহজেই। একই সঙ্গে অনান্য উপকারী পোকাসহ জীব রক্ষা হয়।’
সবজি চাষাবাদের উৎপাদন ব্যয় কমানোসহ নিরাপদ সবজি বাজারজাত করণের লক্ষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও মাঠ পর্যায়ে বাস্তবভিত্তিক কৌশল শেখানো হয় বলে রাইজিংবিডিকে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার।
তানভীর আহমেদ বলেন, ‘গোমস্তাপুর উপেজেলায় প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে জৈবসার ব্যবহার করে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করছেন কৃষকরা। আইপিএম পদ্ধতিতে চাষাবাদে সব রকমের উৎপাদন ব্যয় সাশ্রয় হবে কৃষকদের। ফলনও ভালো হবে। নিরাপদ সবজিও খেতে পারবেন সাধারণ মানুষজন।’