কনকনে শীতের মধ্যেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মৌয়ালরা মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সরিষা ক্ষেতের পাশেই মৌ-বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন তারা। কম খরচে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মধু সংগ্রহ করা যায় বলে তরুণরাও দিনদিন উৎসাহী হয়ে উঠছেন এই পেশার প্রতি। বিশেষ করে কৃষি দপ্তর থেকে স্বল্পসুদে মৌয়ালদের মধ্যে নিরাপদ মধু সংগ্রহের উপকরণ দেওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে আরও বেশি।
জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১১৪ জন মৌয়াল জেলার বিভিন্ন জায়গায় ৭৫৩ টি মৌ-বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহের কাজ করছেন। এরমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ১৫ জন মৌয়াল ১৩০ টি, শিবগঞ্জ উপজেলায় ১৫ জন মৌয়াল ১৩৫টি, গোমস্তাপুর উপজেলায় ৫৫ জন মৌয়াল ৩৫০টি ও ভোলাহাট উপজেলায় ২৮ জন মৌয়াল ২৪০টি মৌ-বাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ কাজ করছেন।
সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণের পদ্ধতি সম্পর্কে মাহিদুল হাসান নামের এক মৌয়াল বলেন, ‘মধু সংগ্রহের জন্য কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় এক প্রকার বিশেষ বাক্স। ওই বাক্সের ভেতরে মোম দিয়ে বানানো একটি সিড লাগানো হয়। তারপরেই বাক্সের মধ্যেই রাখা হয় ‘রানি মৌমাছি।’ রানির আকর্ষণে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে পুরুষ মৌমাছিরা।’
মৌচাষি আনারুল ইসলাম বলেন, ‘বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌ-বাক্স বসানো হয়। এসব বাক্স থেকে ২ সপ্তাহে গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ মণের মতো মধু পাওয়া যায়। এই মধু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা কিনে নিয়ে যান। এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ মণ মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। ১৫০ মণ মধু সংগ্রহ করার ইচ্ছা রয়েছে।’
মধু সংগ্রহের বক্স
মামুন রশিদ নামের আরেক মৌয়াল বলেন, ‘সাধারণ বাজারে সব রকমেরই মধু পাওয়া পাওয়া যায়। শীতকালে সরিষা ফুলের মধু পাওয়া যায়। ৪০০-৪৫০ টাকা কেজি দরে এই মধু বাজারে বিক্রি করা হয়।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে সরিষা ফুল থেকে মধু উৎপাদনের প্রধান মৌসুম। জেলায় চলতি মৌসুমে ২১ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। বাক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকেন মৌয়ালরা। সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু গুণে মানে অত্যন্ত ভালো। এ ফুলের মধুতে কোনো প্রকার ভেজাল থাকে না, একেবারে খাঁটি।’