বছরজুড়ে বিভিন্ন ঘটনার কারণে দেশব্যাপী আলোচনায় ছিলো পঞ্চগড় জেলা। বছরের শুরুর দিকে টিউলিপ ফুল চাষ হওয়ায় পঞ্চগড়ের নাম দেশের পর্যটকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে। তবে চলতি বছরের সবচেয়ে বড় আলোচিত এবং ভয়াবহ দুর্ঘটনা ছিলো করতোয়া নদীতে নৌকাডুবি।
চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীতে শতাধিক যাত্রীসহ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। যা ছিলো দেশের সবচেয়ে বড় আলোচিত এবং ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এই নৌকাডুবিতে ৭২ জন নিখোঁজ হন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭১ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।
মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর অপরপাড়ে বোদেশ্বরী শক্তিপীঠ মন্দিরে মহালয়া পূজা উপলক্ষে আয়োজিত ধর্মসভায় দেবী দুর্গার আরাধনা করার জন্য সনাতনীরা নদী পেরিয়ে মূলত ওই মন্দিরেই যাচ্ছিলেন। সবার ইচ্ছে ছিলো বোধন থেকে বিসর্জন পর্যন্ত দুর্গার পূজা করে আনন্দের সঙ্গে দূর্গোৎসব পালন করার। কিন্তু সব আনন্দই তলিয়ে যায় করতোয়ায়। ঘটনার তিন মাস পার হলেও স্বজনদের আহাজারি এখনো থামেনি। স্বজনহারাদের হৃদয়ে এই ক্ষত থেকে যাবে বহুদিন। নৌকাডুবিতে এতসংখ্যক প্রাণহানির ঘটনায় শোক জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বছরের শেষের দিকে ২৪ ডিসেম্বর দেশজুড়ে নতুন করে আলোচনায় আসে পঞ্চগড়ের নাম। এদিন দুপুরে বিএনপির পূর্বঘোষিত গণমিছিল বাস্তবায়নে দলটির জেলা কার্যালয়ের সামনে জামায়েত হন নেতাকর্মীরা। সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে গণমিছিল বের করলে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হন দলটি। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ ঘটনায় গণমিছিলে আসা আব্দুর রশিদ আরেফিন (৫১) নামে একজন নিহত হন বলে অভিযোগ করে বিএনপি।
বছরের শুরুর দিকে আলোচনায় ছিলো ‘পঞ্চগড়ে ফুটেছে শীতপ্রধান দেশের নজর কাড়া ফুল টিউলিপ’। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় প্রথমবারের মতো ফার্ম আকারে চাষ করে প্রান্তিক ক্ষুদ্র চাষিরা। এ জেলায় শীত মৌসুমে তাপমাত্রা বেশ কম থাকায় টিউলিপ চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পরীক্ষামূলকভাবে এই ফুল উৎপাদনে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলো বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোস্যাল ডেভলেভমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)। টিউলিপ চাষের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর দেশের নানা প্রান্তের পর্যটকরা ছুটে আসেন এখানে।
দুই প্রেমিকাকে একসঙ্গে বিয়ে করে ভাইরাল হয়েছিলেন পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের লক্ষীদ্বার এলাকার রোহিনী চন্দ্র বর্মণ (২৫)। চলতি বছরের ২০ এপ্রিল প্রেমিকা ইতি রানী এবং মমতা রানীকে পাশাপাশি বসিয়ে বিয়ে করে একসঙ্গেই দুই বউকে ঘরে তুলেছিলেন তিনি। রোহিনী বর্মনের এই বিয়ে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়। যদিও পরবর্তীতে প্রেমিকা মমতা রানীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ ঘটেছিলো।
এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রেমের টানে সীমান্ত পেরিয়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় আসেন খুসনামা (১৭) নামে এক ভারতীয় কিশোরী। কিন্তু প্রেমিকের সান্নিধ্য পাবার আগেই পুলিশ তাকে আটক করে।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে খুসনামা জানান, ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার রতনদিঘী গ্রামের ইসরাইল হোসেনের ছেলে আব্দুল লতিফ রাকিব (২১) এর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। ভারতের কেরালা প্রদেশের এক হোটেলে তার ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করতেন রাকিব। তখন তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এদিকে, প্রেমিকা আটকের খবরে সে সময় থানায় ছুটে আসে রাকিব নামের ওই প্রেমিক। পরে তারা দুজনে বিয়ে করার দাবি করলেও কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। প্রেমিকাকে ফিরে পেতে আকুতি করেও লাভ হয়নি তাদের। প্রেমিকের বাড়িতে যাওয়ার জন্য পুলিশের কাছে করা অনুরোধ কাজে আসেনি খুসনামার। আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্বদেশে ফিরে যেতে হয় খুসনামাকে। আলোচিত এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে টেলিফিল্ম নির্মাণ করেছিলেন কথাসাহিত্যিক জিল্লুর রহমান।