চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে পৌষ মাস উপলক্ষে গৃহিণীরা নতুর চালের ভাত, নতুন আলু আর ডিম দিয়ে ঘরোয়া আয়োজনে পিকনিক করেছে। স্থানীয়রা আঞ্চলিক ভাষায় এই ঘরোয়া আয়োজনকে পোষালু বলে ডাকে।
শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে রহনপুর পৌর এলাকার পূর্ণভবা নদীর তীরে বাবুরঘোন এলাকায় পোষালুর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান আকর্ষণ ছিল হারিয়ে যাওয়া গীত। ধান ভানা, চাল পেষা থেকে শুরু করে পোষালুর রান্না করার সময়ও গীত গাইছিল গৃহিণীরা। এই আয়োজন চলতে থাকে বিকেল পর্যন্ত।
জাহিদা জামান জ্যোতি বলেন, ‘আজকের এই দিনটির জন্য আমরা প্রতি বছরই অপেক্ষা করি। সকাল থেকে অনেক আনন্দ করেছি। সবাই এসেছে। একসঙ্গে সবাই নতুন কাপড় পরে এসেছে। দেখে খুবই ভালো লাগছে।’
রওসন আরা বেগম নামে গৃহিণী বলেন, ‘সকাল থেকে এলাকার মেয়েরা সাজগোজ করে পোষালুতে অংশ নিয়েছে। আগের বছরগুলোতে আমরা পিঠা-পুলির আয়োজন করেছি। এবার ভিন্ন কিছু করার উদ্যোগ নিয়ে এই আয়োজন। আমরা অনুষ্ঠানে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত।’
আয়োজিত পোষালুতে এক পোয়া চাল, ডিম আর আলু কেনার জন্য ৩০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। এতে অংশ নেন শতাধিক নারী। এই অনুষ্ঠানে গ্রাম বাংলার আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে স্মরণ করা হয় বলে জানান অনুষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়ক মমতাজ বেগম।
মমতাজ বেগম বলেন, ‘আগে আমরা টানা একযুগ ধরে পিঠাপুলির নবান্ন উৎসব উদযাপন করেছি। আজকের দিনটি জন্য এসব এলাকার গৃহিণীরা অপেক্ষা করে গোটা বছর। প্রতি বছরই পিঠাপুলি দিয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু ভিন্ন কিছু করার ইচ্ছা থেকে নতুন চালের ভাত, নতুন আলু দিয়ে ডিম রান্না করে পোষালুর আয়োজন করা হয়েছে এবার। আলু দিয়ে ডিম রান্না বড় কিছু না হলেও এক সময়ে গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে অনেক বড় পাওয়া ছিল এটি।’
তিনি বলেন, এবারের পোষালুতে বাবুরঘোনসহ আশপাশের গ্রাম দেড়শত গৃহিণী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। তারা গীত গেয়ে আর নানা ফন্দিফিকির করে হেসে-খেলে দিনটি উদয়াপন করেছে। গৃহিণীরা গীত গেয়েছে, নেচেছে, বৃদ্ধারা খোশগল্পে মেতেছে। সবাই নিজের মতো করে আনন্দ করেছে।