খেলাধুলা

ফিরে দেখা ২০২২: নারী ফুটবলে সাফল্যের জয়গান, উল্টোরথে পুরুষ ফুটবল

বহতা নদীর মতো সময় নীরবে বয়ে যায়। সেকেন্ড, মিনিট ঘণ্টা পেরিয়ে গুটি গুটি পায়ে শেষ হয় দিন, মাস, বছর। সময়ের বয়ে চলার মাঝে তৈরি হয় নানা ঘটনা কিংবা অঘটন। ধীরে ধীরে সেগুলো হয়ে যায় কালের সাক্ষী। স্থান করে নেয় স্মৃতির পাতায়। আরও একটি বছর ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে ঝরে গেল। কিন্তু রেখে গেল নানান স্মৃতি ও ঘটনার সাক্ষী। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ করে ফুটবলে যেমন ছিল অর্জন, তেমনি ছিল ব্যর্থতা। সেগুলো নিয়েই এই আয়োজন।

নারী ফুটবলের জয়গান, সাফ জয়ে ইতিহাস: সেপ্টেম্বরে হিমালয়ের পাদদেশে এক নতুন ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। চারবারের ফাইনাল্টি নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতে। পুরুষ ও নারীদের সাফের ইতিহাসে যা ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় শিরোপা। এর আগে ২০০৩ সালে ঘরের মাঠে জাতীয় পুরুষ ফুটবল দল মালদ্বীপকে টাইব্রেকারে হারিয়ে সাফের শিরোপা জিতেছিল। তারও আগে ১৯৯৯ সালে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে (এসএ গেমস) ফুটবল ইভেন্টে এই রঙ্গশালা স্টেডিয়ামেই নেপাল জাতীয় পুরুষ দলকে হারিয়ে স্বর্ণ জিতেছিল বাংলাদেশ। ১৯ সেপ্টেম্বর নেপালের কাঠমান্ডুর রঙ্গশালা স্টেডিয়ামের হাজার বিশেক দর্শককে নিস্তব্ধ, নিঃসাড় করে দিয়ে লাল-সবুজের কেতন উড়িয়েছিলেন সাবিনা-কৃষ্ণারা। হয়েছিলেন নারী সাফের নতুন রানী। মাথায় তুলেছিল দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। তারা দেশে ফিরলে ছাদখোলা বাসে পায় রাজকীয় সংবর্ধনা।

শুধু কি তাই? ২০২২ সালে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল সাতটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে একটিতেও হারেনি। জয় ছিল ছয়টিতে। ড্র ছিল একটিতে।

কেবল জাতীয় দল নয়, ২০২২ সালে নারীদের বয়সভিত্তিক দলগুলোও সাফল্য পেয়েছিল। বছরের শুরুতে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে ভারতে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্স-আপ হয়েছিল গোলাম রাব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। ঢাকায় সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দারুণ সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু নেপালের সঙ্গে দারুণ লড়াই করেও শেষ হাসিটা হাসতে পারেনি। রানার্স-আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল।

২০২২ সালে নারীদের তিনটি সাফের একটি চ্যাম্পিয়ন ও দুটিতে রানার্স-আপ হয় বাংলাদেশের মেয়েরা। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নারী ফুটবলের ইতিহাসে ২০২২ সাল হয়ে যায় সেরা সাফল্যের বছর।

পুরুষ ফুটবলে ব্যর্থতার মিছিল: সাফল্যের নিরিখে ২০২২ সালটি নারী ফুটবলের জন্য সাফল্যে মোড়ানো বছর হলেও পুরুষ ফুটবল হেঁটেছিল উল্টো পথে। মার্চে বছরের প্রথম প্রীতি ম্যাচটি বাংলাদেশ খেলে মালদ্বীপের বিপক্ষে। কিন্তু হার ভিন্ন অন্য ফল হয়নি নতুন কোচ জাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যদের। হেরেছিল ২-০ গোলে।

এরপর একই মাসে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ঘরের মাঠে গোলশূন্য ড্র করে তারা। এরপর জুনে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গেও তাদের মাঠে আরও একটি গোলশূন্য ড্র হয়।

এরপর জুনে অনুষ্ঠিত এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বেও ছিল ব্যর্থতার মিছিল। প্রথম ম্যাচে বাহরাইনের কাছে ২-০ ব্যবধানে, এরপর তুর্কমিনিস্তানের কাছে ২-১ গোলে এবং মালয়েশিয়ার সঙ্গে ৪-১ ব্যবধানে হার মানে।

সবশেষ সেপ্টেম্বরে কম্বোডিয়ার বিপক্ষে বছরের একটি মাত্র জয়টি পায় লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। কম্বোডিয়ার মাঠে রাকিব হোসেনের গোলে ১-০ ব্যবধানের জয়টি পায়। একই মাসের শেষ দিকে নেপালের সঙ্গে রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটি খেলে জামাল-জিকোরা। ওই ম্যাচে বাংলাদেশ হার মানে ৩-১ ব্যবধানে।

জাতীয় দল হতাশ করলেও বয়সভিত্তিক দল বেশ আশা জাগানিয়া পারফরম্যান্স করেছে ২০২২ সালে। গেল বছর অনূর্ধ্ব–১৭ ও অনূর্ধ্ব–২০ পর্যায়ে দুটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেয় বয়সভিত্তিক দল। তার মধ্যে ভারতে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব–১৭ সাফ ফুটবলের সেমিফাইনালে উঠেছিল কিশোররা। রানার্স-আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। অন্যদিকে অনূর্ধ্ব-২০ দল সবার আগে ফাইনাল নিশ্চিত করেও ভারতের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে অতিরিক্ত সময়ে গিয়ে ৫-২ ব্যবধানে হেরে রানার্স-আপ হয়েছিল।

এছাড়া অনূর্ধ্ব-২০ এএফসি কাপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশ শক্তিশালী বাহরাইনের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে। এরপর ভুটানকে হারায় ২-১ গোলে। কিন্তু শেষ দুই ম্যাচে কাতার ও নেপালের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হারে।