টঙ্গীর তুরাগ নদীর পাড়ে আগামী শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার ১ম পর্ব। দুই বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের ইজতেমা। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মুসল্লিরা আসতে শুরু করেছে। মুসল্লিদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে ইজতেমা মাঠের খিত্তাগুলো।
১৬০ একর বিশাল মাঠে মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) থেকে মুসল্লিরা আসতে শুরু করেছেন। আজ বুধবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরের পর থেকে দলে দলে মুসল্লিরা আসছে। আগামীকালের মধ্যে ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হবে বলে মনে করছেন ইজতেমার মুরুব্বিরা। ইতোমধ্যে কামারপাড়া ও টঙ্গী তুরাগ পাড়ের অধিকাংশ খিত্তায় জায়গা পূর্ণ হয়ে গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, অন্যান্যবারের তুলনায় এবার আরও দুই দিন আগে থেকে ইজতেমা ময়দানে সমবেত হচ্ছেন মানুষ। লাখো মুসলিম জনতার পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে টঙ্গীর তুরাগ তীর। পল্টুন ব্রিজ ও প্রতিটি প্রবেশপথে মুসল্লিদের জটলা। তাঁদের সবার সঙ্গে ব্যাগ আর গাট্টি-বোঁচকা। সবাই দল বেঁধে প্রবেশ করছেন মাঠে। উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ মানুষ আশুলিয়া হয়ে কামারপাড়া ব্রিজ ও তুরাগ পাড়ে অবস্থান নিচ্ছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক হয়ে মাঠের পূর্ব দিকে প্রয়োজনীয় গাট্টি-বোঁচকা নিয়ে প্রবেশ করছেন মুসল্লিরা। প্রবেশমুখে মাঠের নকশা টাঙানো রয়েছে। জেলাভিত্তিক খিত্তার নম্বর ও নকশা অনুসরণ করে মাঠে প্রবেশ করছেন তারা। তাদের সহযোগিতা করার জন্য লাঠি হাতে বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইজতেমা মাঠে দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবক মুসল্লিরা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
পুরান ঢাকা থেকে আগত মুসল্লি আফসার আলী বলেন, ‘গতকাল দুপুরে চলে এসেছি আমরা। গতকাল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন আসছে। তবে আজ মানুষের ঢল নেমেছে।’
পাবনার বেড়া থেকে আগত তৈয়ব আলী বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে ৪০ জন এসেছি। আমাদের খিত্তায় অবস্থান করছি। এবার অনেক লোক সমাগম হবে। কারণ দুই দিন আগেই এত বেশি মুসল্লি আগে কখনো দেখিনি।’
ইজতেমা মাঠের দায়িত্বশীল মুরুব্বী খোরশেদ আলম বলেন, ‘বিভিন্ন জেলা থেকে মুসল্লিরা আসতে শুরু করেছেন। আমাদের উত্তর ও নদী পশ্চিম পাড়ের অধিকাংশ জায়গা মুসল্লি দিয়ে ভরে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এবার বেশি মুসল্লি আসবে।’
গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, এবার ইজতেমা চলাকালে কর্তব্যরত বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তাদের দাপ্তরিক পরিচয়পত্র বহন করতে হবে। ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ময়দানের আশপাশের অবৈধ স্থাপনা ও দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভেজালমুক্ত খাদ্য পরিবেশন নিশ্চিত করতে বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে।
১৯৬৭ সাল থেকে নিয়মিত বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৯৬ সালে একই বছর দুই বার বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০১১ সাল থেকে নিয়মিত দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হচ্ছে। করোনাকালীন সময়ে দুই বছর বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন বন্ধ ছিল।