স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ঘরে ঘরে ছিল না বর্তমান সময়ের মতো টেলিভিশন, ডিশের লাইন, ইন্টারনেট ও স্মার্ট ফোন। তখন মানুষ বিনোদনের জন্য ছবি (সিনেমা) দেখার জন্য পরিবারের সবাইকে নিয়ে ছুটে যেতেন বিভিন্ন সিনেমা হলগুলোতে। সপরিবারে বড় পর্দায় সিনেমা দেখার মজাই ছিল অন্যরকম তাদের কাছে।
ঈদ, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিভিন্ন উৎসবে সিনেমা হলের টিকিট ব্ল্যাকে বিক্রি হতো তখন। কিন্তু আধুনিক যুগে স্মার্টফোন, ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি কাছে হেরে যাচ্ছে সেই সিনেমা হলের দাম্ভিকতা।
আরও পড়ুন: টাঙ্গাইলে সিনেমা হলে দেখানো হবে বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল
টাঙ্গাইল শহরের একে একে পাঁচটি সিনেমা হলই ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। জেলা শহরের বাইরেও অনিয়মিত দুই একটি যে সিনেমা হল চালু আছে সেগুলোকে গুনতে হচ্ছে লোকসান। তবে জেলায় বর্তমানে কতগুলো সিনেমা হল চালু আছে তার কোনো তথ্য দিতে পারেনি জেলা তথ্য অফিস এবং জেলা প্রশাসক কার্যালয়।
সিনেমা হলের ব্যবসায়ী ও দর্শকরা জানান, টাঙ্গাইল শহরের প্রাণকেন্দ্র নিরালা মোড়ে রওশন হল, মেইন রোডে রূপবানী হল, জেলা সদর রোডে রূপসী হল, পূর্ব আদালত পাড়া এলাকায় কেয়া হল ও মালঞ্চ হল চালু ছিলো। এসব হলে চার শিফটে সিনেমা প্রদর্শনী হতো। শহর থেকে শুরু করে শহরতলীতে পোস্টার ও মাইকিং করে সিনেমা মুক্তির তারিখ, নায়ক-নায়িক, ভিলেন এবং হলের নাম প্রচার করে দিন রাত মাইকিং হতো। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে সিনেমা হলের সামনে উপচেপড়া ভিড় থাকতো। ব্ল্যাকের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি হতো। কে কার আগে হলের ভেতরে প্রবেশ করবে এ নিয়েও চলতো প্রতিযোগিতা। কুলি থেকে চা দোকানি, কিংবা সরকারি অফিসের বড় কর্তার মুখে লেগে থাকত সিনেমার গল্প। নব্বই দশকেও রাজনীতি ও সিনেমার আলোচনা চলত সমানে-সমান। কে সমতা বা সুধী আসনে সিনেমা দেখে, কে সৌখিনে বা কে বিলাস আসনে এর ওপর সামাজিক মর্যাদাও বিবেচনা হত। কিন্তু কালের বিবর্তনের আধুনিকতার ছোয়ায় শহরের সব সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
সর্বশেষ গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর শহরের মালঞ্চ সিনেমা হল ভেঙে ফেলা হয়। সেখানে বহুতল ভবণের কাজ চলমান। এছাড়া ১৯৯৬ সালে রওশন হলে ভেঙে মার্কেট করা হয়। ২০০০ সালের দিকে রূপবানী, ২০০৮ সালে রূপসী ও ২০১৯ সালে কেয়া হল বন্ধ করে সেখানে বহুতল ভবনের কাজ চলমান আছে।
মালঞ্চ সিনেমা হলের বর্তমান ভেতরের দৃশ্য
৭২ বছরের প্রবীণ শাহজাহান মিয়া বলেন, স্বাধীনতা পরে গ্রামের ভিত্তবানদের অ্যান্টেনাভিত্তিক বাংলাদেশ টেলিভিশন দেখতাম। যে বাড়িতে টিভি চলতো ঈদসহ শুক্রবার ছুটির দিনে ওই বাড়িতে ভিড় জমত। এছাড়াও টাকা না থাকায় ৯০ দশকে জমি বিক্রি করে শাবনুরের ছবি দেখেছি সিনেমা হলে। ওই সময় সিনেমা হলের প্রতি আমাকের আকর্ষণ ছিলো। পরিবারের সবাইকে নিয়ে যে কোনো ছবি দেখা যেতো। বর্তমান সময়ে নিজের বউ নিয়েও অনেক ছবি দেখতে অস্বস্তি মনে হয়।’
সাংস্কৃতিক কর্মী অ্যাডভোকেট আব্দুল গনি আল রুহী বলেন, ‘সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিবেশ বিঘ্ন হচ্ছে। সিনেমা হল না থাকায় মাদকাসক্তসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে।’
মালঞ্চ হলের ব্যবস্থাপক আব্দুল মিয়া বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তির কারণে হলের আয় রোজগার না থাকায় বছরের পর বছর লোকসান গুনতে হয়েছে। তাই হলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’