বাজেটের ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ঋণ নেওয়া হচ্ছে ব্যাংকিং খাত থেকে। অন্য দিকে ব্যাংক বহির্ভূত খাত বিশেষত সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কমেছে। তবে এ খাতে সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি। সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নেয়, এর দ্বিগুণ ব্যয় হচ্ছে এ খাতের সুদ পরিশোধে। আবার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সঞ্চয়পত্রের দায়ও মেটানো হচ্ছে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিট ঋণ নেওয়া হয়েছিল ৭৯ হাজার ২১১ কোটি টাকা। যা অভ্যন্তরীণ ঋণের ৭৩ শতাংশ। ব্যাংক খাতের মধ্যে ট্রেজারি বন্ড থেকে ৪৩ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা, ট্রেজারি বিল থেকে ২৫ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা ও সুকুক থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে।
চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২২) ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ গ্রহণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার আগের অর্থবছরের তুলনায় অনেক কম। তবে ডিসেম্বরে এসে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বেড়ে গেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে নিট ঋণ নেওয়া হয়েছে ২৯ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। এটি অভ্যন্তরীণ ঋণের মাত্র ২৭ শতাংশ। ব্যাংক বহির্ভূত খাতের মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৯ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা (বাজেটে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা) এবং অন্যান্য খাত থেকে ৯ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, সঞ্চয়পত্র খাতে চলমান সংস্কার কার্যক্রম তথা ডিজিটালাইজ করা, বিনিয়োগসীমা নির্ধারণ ও সুদের হার কমিয়ে আনা ইত্যাদি কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি আগের তুলনায় কমেছে এবং পাশাপাশি এ খাতে সরকারের ঋণ নির্ভরতাও কমেছে। এছাড়া, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সময়কালের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়েনি, উল্টো গ্রাহকরা সঞ্চয়পত্র ভেঙে টাকা তুলে নিয়েছে বেশি।
অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ঋণের সুদ (অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক) পরিশোধে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৭৫ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। এটি বাজেটে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি। আলোচ্য অর্থবছরে সুদ পরিশোধ খাতে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭১ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে মোট ব্যয় হয়েছে ৭১ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাতে ২৪ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র খাতে ৪০ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য খাতের বিপরীতে ৭ হাজার ১২৮ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করা হয়েছে। অন্য দিকে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম ব্যয় হয়েছে। এ খাতে সুদ পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। এর বিপরীতে সুদ পরিশোধ করা হয়েছে ৪ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা।