সিলেটে বিপিএলের শেষ ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক ইমরুল কায়েস নিজের আউটকে আর্শীবাদ হিসেবে দেখেছিলেন! তার আউটের পর ক্রিজে পা রেখেছিলেন জনসন চার্লস। ২১১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় কুমিল্লা তখন ধুকছিল। মাঠে নেমে ৫৬ বলে ১০৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েছিলেন ক্যারিবীয় ক্রিকেটার।
ঢাকায় সুপার লিগে খুলনা টাইগার্সের ইয়াসির আলী রাব্বীর আউটও দলের আর্শীবাদ হয়ে এসেছিল! ১৭০ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ১৩ বলে ১৩ রানে আউট হন রাব্বী। ফরচুন বরিশালকে হারাতে ১৯ বলে তখন ৩৯ রান দরকার ছিল খুলনার। ক্রিজে এসে অচেনা হাবিবুর রহমান সোহান খেলাটাই পাল্টে দেন। মাত্র ৯ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৩০ রানের ইনিংস খেলে ৩ বল আগে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। ডানহাতি ব্যাটসম্যান ১৯তম ওভারে ইবাদতকে দুটি ছক্কা মারেন চোখের পলকে। এর আগের ওভারে করিম জানাতের প্রায় ইয়র্কার ডেলিভারীতে ফুলটস বানিয়ে মাথার উপর দিয়ে মারেন চার।
শেষ ওভারে মিরাজের বল গ্যালারিতে পাঠিয়ে নিশ্চিত করে দলের জয়। ৩৩৩.৩৩ স্ট্রাইক রেটে খেলা ইনিংসটি দিয়ে তরুণ ক্রিকেটার সব আলো নিজের করে নিয়েছেন। এর আগে দুই ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন। প্রথম ম্যাচে ৬ ও পরের ম্যাচে ৪ রানের বেশি করতে পারেননি। বিস্ফোরক এ ইনিংস খেলার পর সোহানকে নিয়ে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে গেছে। কে এই সোহান? কিভাবে উঠে এলো বড়দের ক্রিকেটে?
বিপিএলের ড্রাফট থেকে খুলনা টাইগার্স দলে ভেড়ায় সোহানকে। প্লেয়ার ড্রাফটে ক্যাটাগরি ‘জি’ তে ৩৬ জন ক্রিকেটারের নাম ছিল। সেখান থেকে কেবল সোহানই দল পান এবং তাকে দলে ভেড়ান খুলনার কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে সোহানের নামডাক শোনেন খালেদ মাহমুদ। নতুন বলে স্বাচ্ছন্দ্যে মারতে পারেন, বল উড়াতে পারে উইকেটের চারিপাশে এমন কথা শুনেছেন খালেদ মাহমুদ।
গত ফেব্রুয়ারিতে নিজের অভিষেক টি-টোয়েন্টিতে ৫২ বলে ১১৩ রান করে লাইমলাইটে আসেন। ওই আসরে ৪ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি, ২ ফিফটিতে ৬৩ গড়ে ২৫০ রান করেছিলেন। নজরকাড়া ছিল তার স্ট্রাইকরেট, ১৯০। এরপর গত জুনে রাজশাহীতে একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে ৮ ম্যাচে ৩৬৯ রান করে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান। ওই টুর্নামেন্টে সৌম্য, আফিফ, সিকান্দার রাজা, থিসারা পেরেরার মতো ক্রিকেটাররাও খেলেছিলেন।
তিন বছর আগে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব একাডেমিতে ক্রিকেটের হাতেখড়ি সোহানের। প্রথম বিভাগের পর ঢাকা লিগে খেলার অপেক্ষায় এ ক্রিকেটার। তাকে এরই মধ্যে দলে ভিড়িয়েছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। বিপিএলে শেষ ম্যাচ খেলে কিছুটা আলো ছড়িয়েছেন এ ক্রিকেটার। সামনের পথচলাটা আরো কঠিন হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দেখার বিষয় বাইশ ছোঁয়ার অপেক্ষায় থাকা ক্রিকেটার নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ার কতদূর টেনে নিতে পারেন।
সোহানের ব্যাটিং তাণ্ডবে মুগ্ধ হয়েছেন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজও,‘অসাধারণ ব্যাটিং করেছে (হাবিবুর রহমান সোহান)। বিশেষ করে, এরকম চাপের পরিস্থিতিতে ব্যাট করেছে, এরকম উত্তেজনার ম্যাচ খেলেছে, অবশ্যই অনেক ভালো ব্যাটিং করেছে।'