খেলাধুলা

গাঙ্গুলির মনে হয়েছিল, বাংলাদেশ অভিষেক টেস্টে ভারতকে হারিয়ে দিতে পারে

চারিদিকে সাজসাজ রব। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মুখী হাজারো মানুষ। ছেলেরা শার্ট-প্যান্ট, পাঞ্জাবি পড়া। নারীরা কেউ শাড়ীতে, কেউ সালোয়ার কামিজে। কারো হাতে বাংলাদেশ লিখা প্ল্যাকার্ড। কেউ হাজির ঢাক-ঢোল নিয়ে। বাংলাদেশের প্রথম টেস্টের সকালের চিত্রটা ছিল এমনই।

২০০০ সালের ১০ নভেম্বরের সকালটা ছিল এমন। সেদিন ভারতকে আতিথেয়তা দেয় বাংলাদেশ। নবম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সেদিন অভিষেক হয় টেস্ট ক্রিকেটে। হাবিবুল বাশারের ৭১ ও আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ১৪৫ রানের ইনিংসে চারশো রানের চূড়ায় চড়ে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ ভারতের অধিনায়ক তখন সৌরভ গাঙ্গুলি। বাংলাদেশের এমন ব্যাটিংয়ে তার মনে হয়েছিল, ভারত হেরে যেতে পারে ঢাকা টেস্ট! 

২৩ বছর পর কথার ঝাঁপি খুলে পুরনো দিনে ফিরে যান গাঙ্গুলি। ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক। সেদিন টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন নাঈমুর রহমান দুর্জয়। ভারত টসে জিতলে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠাত কিনা সেই প্রশ্ন গাঙ্গুলিকে করা হয়েছিল।

উত্তরে ভারতের ক্রিকেটের মহারাজা বলেছেন,‘না! পাঠাতাম না। আমি টসে হেরে গিয়েছিলাম, ওরা ব্যাট করেছিল। ঠিকই করেছিল। কারণ এত ভালো উইকেট। তখন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের উইকেট এত ভালো ছিল। আমি তো ওপেন করতাম। যখন আমি আর শচীন ব্যাটিং করতে যেতাম, উইকেটে শাইন হতো। দেখে বোঝা যেত, কত ভালো উইকেট। আর ভালো উইকেটে কখনও প্রতিপক্ষকে ব্যাটিং করতে দিতে নেই (হাসি)।’

বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট দিয়ে নতুন এক অধ্যায়ে পা রেখেছিলেন গাঙ্গুলি। ভারতের টেস্ট অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন ওই সফরের ঠিক আগেই। শচীন, দ্রাবিড়দের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে গাঙ্গুলির সাফল্যমণ্ডিত অধ্যায়ের পথচলার শুরু হয়েছিল।

২৩ বছর পরও গাঙ্গুলির স্মৃতিতে অম্লান সেই দিন, ‘আমার প্রথম টেস্ট অধিনায়কত্ব বাংলাদেশের মাটিতে। বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সঙ্গে আমার নাম সবসময় জড়িয়ে থাকবে। কারণ ওটা ছিল বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ম্যাচ, ২০০১ সালে (আসলে ২০০০)। আর আমার প্রথম টেস্ট, ভারতের অধিনায়ক হিসেবে।’

‘আমার এখনও মনে আছে, তখনও নতুন স্টেডিয়াম হয়নি (মিরপুর শের-ই-বাংলা)। পুরনো স্টেডিয়াম, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে খেলা হয়েছিল। বাংলাদেশ মনে হয় প্রথম ইনিংসে লিড নিয়েছিল। তারপর যখন ড্রেসিং রুমে ঢুকি আমি, আমার মনে হলো, এ কী! আমি অধিনায়ক হিসেবে আমার প্রথম ম্যাচ হেরে যাব! তারপর আমরা ফিরে এসে টেস্ট ম্যাচটা জিতি।’

অবশ্য বাংলাদেশে এর আগেও এসেছিলেন গাঙ্গুলি। ১৯৮৯ সালে যুব এশিয়া কাপ খেলতে এসেছিলেন। ওই বছর ঢাকা লিগে খেলার প্রস্তাব পান। পরের বছর ঢাকা লিগেও খেলেছিলেন। তাইতো তার হৃদয়ের খুব কাছেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ, ‘আমার জীবনের বহু মূল্যবান মুহূর্তের সাক্ষী বাংলাদেশে ও বাংলাদেশের মানুষ। এখনও মনে আছে, ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপের ফাইনালে আমরা ৩১৫ রান তাড়া করে জিতি। তখনকার দিনে ৩১৫ রান অনেক বড় ছিল। কিন্তু আমার মনে আছে, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে এতো সুন্দর আলো বা ফ্লাডলাইট ছিল না তখন। ফুটবলের বাতির আলোয় খেলা হয়েছে শেষ পর্যন্ত আর আমরা সেই ম্যাচটা সেখানে জিতি।’