সারা বাংলা

পঞ্চগড়ে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) বার্ষিক সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হওয়া পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, এ জন্য পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে র‍্যাব ও বিজিবি।

শনিবার (৪ মার্চ) সকাল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও বিকেলের দিকে টহল জোরদার করে প্রশাসন। এ সময় শহরে যানচলাচল এবং সাধারণ মানুষের উপস্থিতি কম দেখা যায়। 

শুক্রবার (৩ মার্চ) আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) বার্ষিক সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয় পঞ্চগড়। এদিন দুপুরের পর থেকে রাত অবধি গুলির শব্দে উত্তপ্ত ছিল পুরো শহর। মহাসড়কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল ইট-পাথর। বন্ধ ছিল যান চলাচল। ঘটেছিল দোকানপাটসহ বিভিন্নস্থানে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও। চতুর্দিকে বিরাজ করছিল আতঙ্ক। রাত ৯টার দিকে জলসা স্থগিত ঘোষণা করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। 

আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসা বন্ধসহ তাদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ করে মুসল্লিরা। পরে পুলিশের সঙ্গে মুসল্লিদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের একজন এবং মুসল্লিদের মধ্যে একজন নিহত হন।

দীর্ঘদিন ধরে আহমদিয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদসহ বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন। এবার পঞ্চগড়ের আহমদনগর এলাকায় ৩ মার্চ থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী বার্ষিক সালানা জলসার আয়োজন করে। এই জলসা বন্ধ করার জন্য বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) দুপুর থেকে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধসহ ভাঙচুর ও আহমদিয়াদের বাড়িতে হামলা করে বিক্ষুব্ধরা। শুক্রবারও বিক্ষোভ করে তারা। এরপরে সংঘর্ষ বাধে। 

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার জুমআর নামাজের পর আহমদিয়াদের তিন দিনব্যাপী বার্ষিক সালানা জলসা বন্ধসহ তাদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে জেলা শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। 

সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদের ডাকে এ বিক্ষোভ মিছিল কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে বড় পরিসরে চৌরঙ্গী মোড়ের দিকে আসতে থাকে। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশের উপর হামলা করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে মুসল্লিরা। পুলিশও শত শত টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এর মধ্যে বিক্ষোভকারীদের কয়েকটি অংশ জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তারা পুলিশ ও বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর, ট্রাফিক পুলিশের অফিসে অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া আরেকটি অংশ পঞ্চগড় বাজারে আহমদিয়াদের চারটি দোকানের মালামাল বের করে আগুনে পুড়ে দেয়। তাদের অন্তত ২০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে আহমদিয়া সম্প্রদায়।

বিক্ষোভের খবর পেয়ে আগে থেকে পঞ্চগড় শহরের চৌরঙ্গী মোড়সহ বেশ কয়েকটি স্থানে শুরু থেকে পুলিশ অবস্থান নিয়েছিল। পুলিশের সঙ্গে বিজিবি এবং র‌্যাবও অবস্থান নেয়। তবে বিক্ষুব্ধ জনতাকে কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে জলসা স্থগিতে ঘোষণা দেয় প্রশাসন। 

পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। বর্তমান পঞ্চগড় শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, এ জন্য প্রশাসন তৎপর রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।