স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। সংঘর্ষের সময় ৭ জন পুলিশ সদস্য আহত হওয়ায় এবং পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়ার কারণে নগরীর মতিহার থানায় এ মামলা করা হয়েছে।
সোমবার (১৩ মার্চ) মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ওসি মাসুদ পারভেজ জানান, থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমানত উল্লাহ বাদী হয়ে গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মামলা করেছেন। এতে বলা হয়েছে, সংঘর্ষের সময় বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় সাতজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এছাড়া পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়েছে। এজাহারে কারো নাম উল্লেখ নেই। তবে নাম না জানা আসামি করা হয়েছে ২৫০-৩০০ জনকে। এ মামলায় আজ (সোমবার) দুপুর পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। হামলার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও জানান ওসি।
এদিকে, সংঘর্ষের সময় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে আহত করার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। রোববার বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবদুস সালাম বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় নাম না জানা ৫০০ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা করেছেন। মামলা হওয়ার পর পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তার নাম তসলিম আলী ওরফে পিটার (৪৫)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারের বাসের চেইন মাস্টার।
এদিকে, ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীরকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে সোমবার সকালে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অধ্যাপক প্রদীপ কুমার জানান, সাবেক প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তারিকুল হাসান এবং সহকারী প্রক্টর আরিফুর রহমানকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। আজ তাদের কাছে চিঠি পৌঁছে দেওয়া হবে।
এর আগে, গত শনিবার সন্ধ্যায় এক রাবি শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা কাটাকাটির জের ধরে সহপাঠীরা বিনোদপুর বাজারে বাস চালক ও হেলপারকে মারধর করেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এতে বাধা দিলে তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিরোধ লেগে যায়। এরপর শনিবার রাতভর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর বাজারের দোকানপাটে আগুন দিয়েছেন। কয়েকজন ব্যবসায়ীও আহত হয়েছেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের ইটপাটকেলে অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এই ঘটনায় রোববার দিনভর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন। আন্দোলনের একপর্যায়ে সকালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারকে অবরুদ্ধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। তারা রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এছাড়া, রোববার সন্ধ্যায় দ্বিতীয়দফার মতো তারা রেলপথ অবরোধ করেন। রেললাইনে আগুন ধরিয়ে তারা বিক্ষোভ করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিলে রাত পৌনে ১টার দিকে রাজশাহী থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
এদিকে রোববার রাতে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। সোমবার শিক্ষার্থীরা কোন আন্দোলন করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন রয়েছে।