কুমিল্লা নগরীর অন্যতম নান্দনিক স্থাপনা নবাব বাড়ি। এটি শহরের প্রাচীন মুসলিম আবাসগুলির অন্যতম। এই ঐতিহ্য সম্বলিত বাড়িটিতে এখন অবাধে চলে মাদকদ্রব্য সেবন। সেখানে প্রকাশ্যে নিয়মিত মাদক ও জুয়ার আড্ডা বসে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নবাব বাড়ির উত্তর-পশ্চিম পাশের দেওয়াল ঘেঁষে যথারীতি আস্তানা গেড়ে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য সেবন করছেন মাদকসেবীরা। বাড়ির ভেতরের কয়েকটি কক্ষে মাদকদ্রব্যের উচ্ছিষ্টগুলো রাখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ফেনসিডিল, গাঁজা, মদ ও ইয়াবা সেবনের নানা উপকরণে ভর্তি ঘরগুলো। প্রতিদিন এই নবাব বাড়িতে শুরু হয় মাদকাসক্তদের এসব কর্মকাণ্ড এবং চলতে থাকে মধ্যরাত পর্যন্ত।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুধু মাদকই নয়, নবাব বাড়িতে সংঘটিত হয় বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক অপরাধও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, বহিরাগত লোকজন গ্রুপ আকারে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭-৮ টার দিকে এখানে এসে মাদকের আড্ডা বসান। প্রায় সারা রাত চলতে থাকে এমন আড্ডা। লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলাও চলে এই ঐতিহ্য সম্বলিত নবাব বাড়িতে। এমনকি এসব মাদকসেবীদের নারী নিয়েও এখানে আসতে দেখা যায়। এছাড়া তারা বিভিন্ন সময়ে ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ করছে। ফলে এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন।
স্থানীয়দের অনেকে বলেন, এই বাড়িটিকে সন্ধ্যার পর মাদকসেবী কয়েকটি গ্রুপ আড্ডার আসর বসায়। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া তরুণদেরও ভেতরে যেতে দেখা যায়। মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে চৌমুহনীর সচেতন মানুষ যদি প্রতিবাদ করে তাহলে মাদক কারবারিরা কোনো না কোনোভাবে ফাঁসিয়ে দিয়ে উল্টো প্রতিবাদকারীদের হয়রানি করতে শুরু করেন। এমনকি হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কসবা শাহপুরের সৈয়দ বাড়ির সৈয়দ জুলফিকার হায়দারের ছেলে সৈয়দ বশরত আলী কুমিল্লা শহরের চর্থা এলাকায় এসে আবাস গড়েন। তিনিই এই ঐতিহাসিক বাড়িটির নির্মাতা। তাঁর আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটলে ১৮৭৮ সনে তিনি এ বাড়ি নির্মাণ করেন। তখন বাড়িটি একতলা ছিলো। পরবর্তীতে ১৯০৮ সালে নবাব হোচ্ছাম হায়দার বাড়ির বর্তমান অবয়বটি নির্মাণ করেন। নান্দনিক এ বাড়ির সীমানা সাড়ে চার একর বা বারো বিঘা। মূল বাড়িটির একতলায় ৪,৮০০ আর দোতালায় ৪,৮০০ বর্গফুট মিলে মোট ৯,৬০০ বর্গফুট জায়গা রয়েছে।
মাদকের বিষয়ে জানতে চাইলে নবাব পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের বংশধর সৈয়দ বাইজিদ হায়দার বলেন, ‘আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী বাড়ির মাঠে আগে স্থানীয় ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলা করতো। ইদানিং কিছু লোক আমাদের মূল বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত বাড়িটিতে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করছে। প্রশাসন যাতে মাদকের আড্ডাগুলো বন্ধ করে এই বিষয়ে আমি খুব তাড়াতাড়ি একটি অভিযোগ দেবো।’
কুমিল্লা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আফজাল হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। এখানে কোতয়ালী থানা নিয়মিত যাতে টহল দেয় সে ব্যবস্থা করা হবে।’