কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের রৌহা গ্রামের ব্যবসায়ী এরশাদ উদ্দিন। গত তিন বছর ধরে রমজান এলে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের মানুষের কাছে ১০ টাকা লিটারে দুধ বিক্রি করেন তিনি। তার এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে। নামমাত্র মূল্যে দুধ পেয়ে খুশি দরিদ্র মানুষেরা।
রমজান শুরুর আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। এবার আরও বড় পরিসরে ১০ টাকায় দুধ বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মিলস্কেল রি-প্রসেস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও জেসি অ্যাগ্রো ফার্মের চেয়ারম্যান এরশাদ উদ্দিন। তিনি এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি ফেসবুকে ওয়ালে নামমাত্র দামে দুধ বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন। রোজার প্রথম দিন থেকে সারা মাস ১০ টাকা লিটারে দুধ বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
জেসি অ্যাগ্রো ফার্মে বর্তমানে পাঁচ শতাধিক গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। সেখানে উন্নতজাতের ২৫টি গাভীও পালন করা হচ্ছে। গাভীগুলো থেকে প্রতিদিন ৭০-৭৫ লিটার দুধ পান। আর এ দুধই ১০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করা হবে রমজানে। গত বছর এর পরিধি এত বড় ছিল না। এবার খামারে গাভীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আরও বড় পরিসরে দুধ বিক্রি করা হবে।
রৌহা গ্রামের দিনমজুর শামছুদ্দিন এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ‘রমজানে দুধের চাহিদা থাকে। তাই এ সময় দুধের দামও থাকে বেশি। অনেকের দুধ কেনার সামর্থ থাকে না। কিন্তু এরশাদ ভাই কয়েক বছর ধরে এলাকার মানুষদের জন্য এমন একটা ব্যবস্থা করেছেন, যার ফলে রমজানে দুধ খেতে পারি। তিনি মানুষের বিপদের বন্ধু। আমরা এলাকাবাসী তাকে নিয়ে গর্ব করি।’
এ ব্যাপারে জেসি অ্যাগ্রো ফার্মের চেয়ারম্যান এরশাদ উদ্দিন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সারা দিন রোজা শেষে মানুষ একটু ভালোমন্দ খেতে চায়। সবারই ইচ্ছে থাকে ইফতারে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে দুধ থাকুক। কিন্তু দুধসহ সব কিছুর দাম তো আকাশছোঁয়া। ইচ্ছা থাকলেও সবাই দুধ কিনতে পারে না। এসব বিষয় ভেবে এবারে উদ্যোগটি আমি বড় করে নিয়েছি। গত রমজানে এক টন পরিমাণ দুধ বিক্রি করেছি। এবার ইচ্ছা আছে পরিমাণটা দ্বিগুণ করার।’
এরশাদ উদ্দিন বলেন, ‘রোজার প্রথম দিন থেকে প্রতিদিন ৭০ জনের কাছে এক লিটার করে দুধ বেচা হবে। এটি চলবে রোজার শেষ দিন পর্যন্ত। প্রতি লিটার দুধের দাম ধরা হয়েছে মাত্র ১০ টাকা। এটি আর কিছু নয়, প্রতীকী মূল্য মাত্র। নিয়ামতপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের লোকজনের কাছে এই দুধ বিক্রি করা হবে। এসব এলাকায় গ্রুপ ও রুটিন করে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত গ্রুপ রুটিন অনুযায়ী দুধ কিনতে আসবে। ফলে দুধ কেনাবেচায় বাড়তি ভিড় বা হাঙ্গামা হবে না।’
এরশাদ উদ্দিনের ১০ টাকা লিটার করে দুধ বিক্রির এই উদ্যোগে সাধুবাদ জানিয়েছেন নিয়ামতপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল সেলিম। তিনি বলেন, রমজানে কয়েক বছর ধরে ১০ টাকা লিটারে দুধ বিক্রি করছেন এরশাদ উদ্দিন। তার এমন উদ্যোগের ফলে এলাকার নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষেরা দুধ খেতে পারছে।