রোজার ঈদের আগেই শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ এবং বন্ধ সব রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালুসহ ৬ দফা দাবি জানিয়েছে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের আহবায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা।
সংবাদ সম্মেলনে আগামী ৭ এপ্রিল রাজঘাট, ১৪ এপ্রিল ইস্টার্ন গেট ও ১৫ এপ্রিল খালিশপুর শিল্পাঞ্চলে জনসভার ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি আদায় না হলে ঈদের পর বিভাগীয় সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২০ সালের ২ জুলাই সরকার ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দেয়। মিল বন্ধের দুই মাসের মধ্যে সব পাওনা পরিশোধের অঙ্গীকার করলেও এখন পর্যন্ত অনেক শ্রমিক তাদের বকেয়া পাওনা পাননি। খুলনার খালিশপুর জুট মিল ও দৌলতপুর জুট মিল, সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুট মিল এবং চট্টগ্রামের কেএফডি ও আর আর জুট মিলের শ্রমিকরা এখনো বকেয়া কোনো টাকা পায়নি। এছাড়াও বিভিন্ন মিলের শ্রমিক যাদের মামলা আছে, তাদেরও বকেয়ার টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে না। অনেকে সঞ্চয়পত্রের কাগজ এখনো পাননি। ফলে শ্রমিকরা নিদারুণ যন্ত্রণা ও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিনাতিপাত করছে।
বর্তমানে জীবনযাপন ব্যয় অত্যধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মহীন এবং বকেয়া পাওনা থেকে বঞ্চিত শ্রমিকরা তাদের পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। রোজা এবং ঈদুল ফিতর সমাগত। ঈদের আগে সব শ্রমিকের বকেয়া পাওনা পরিশোধ এবং সঞ্চয়পত্রের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা জরুরি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, পরিকল্পনাহীনতা ও ব্যবস্থাপনা অদক্ষতার কারণে বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোকে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। পাটের কৃষি, পাট বাজারজাতকরণ, পাটের ব্যবসা-বাণিজ্য, পাট প্রক্রিয়াজাতকরণ, শিল্প কলকারখানাসহ আনুমানিক ৪ কোটি মানুষের জীবন জীবিকার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত সমগ্র পাট অর্থনীতি। পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক তন্তু পাটের প্রায় ৪০ ভাগই আমরা উৎপাদন করি এবং পরিবেশ বিপর্যয়কারী নাইলন-পলিথিন সিনথেটিকসহ ক্ষতিকর কৃত্রিম তন্তুর বিপরীতে পরিবেশবান্ধব উৎপাদনে আমাদের আছে নিরঙ্কুশ তুলনামূলক প্রাকৃতিক সুবিধা। পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সারা বিশ্বে পাট পণ্যের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। পরিষদের ৬ দফা দাবি হচ্ছে: ৫টি পাটকল (খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, জাতীয় জুট মিল, কেএফডি, আরআর) শ্রমিকসহ যেসকল শ্রমিকরা এখনও তাদের বকেয়া পাওনা পায়নি তাদের পাওনা আগামী ঈদ-উল-ফিতরের আগে পরিশোধ করতে হবে। যে সকল শ্রমিকরা সঞ্চয়পত্রের কাগজ পাননি তাদের অবিলম্বে তা হস্তান্তর করতে হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকল অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালু করতে হবে। লোকসানের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে এবং লুটপাটকারীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করাসহ শাস্তি দিতে হবে।
ব্যক্তি মালিকানাধীন পাটকল শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী করতে হবে এবং তাদের নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র দিতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মজুরি নিত্যপণ্যের বাজারদর, শ্রমিক ও তার পরিবারের জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় উপাদানের মূল্য, দক্ষতা এবং ব্যয়িত শ্রমশক্তি পুনরুৎপাদনে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণের সক্ষমতা অর্জন বিবেচনায় নিয়ে নির্ধারণ করতে হবে।
‘ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং এ্যাক্ট’ বাস্তবায়ন করতে হবে। সময়ের চাহিদা বিবেচনা করে পাট থেকে বহুমুখী পণ্য উৎপাদনের জন্য গবেষণাখাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিতে হবে।
বিজেএমসি’র প্রশাসন থেকে অতিরিক্ত জনবল ছাটাই করতে হবে। পাট মন্ত্রণালয়ের অযাচিত খবরদারি বন্ধ করে রাষ্ট্রায়ত পাটকল পরিচালনা সংস্থাটিকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে। চেয়ারম্যানসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে পাটকল পরিচালনা সংশ্লিষ্ট দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দক্ষ ও সৎ ব্যক্তিদের পদায়ন করতে হবে। পাটকলগুলোর কর্মকর্তাদের দায়িত্বকে শ্রমিকদের কাছে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
পাটকল রক্ষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক জনার্দন দত্ত নান্টু, আ ফ ম মহসিন, মোজাম্মেল হক খান, মনির চৌধুরী সোহেল, মিজানুর রহমান বাবু, কোহিনুর আক্তার কনাসহ পরিষদের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন পাটকলের শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।